প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ যেসব কারণে চান শিক্ষার্থীরা

0

ঢাকা অফিস: কোটা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও স্বৈরাচার সরকারের পক্ষে নানা মন্তব্যের অভিযোগ রয়েছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বিরুদ্ধে। বিচার ব্যবস্থাকে একটি স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাই তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন। কোটা আন্দোলন নিয়ে প্রধান বিচারপতির নানা বিতর্কিত মন্তব্য এবং গত কয়েকদিনে প্রধান বিচারপতি ও ছাত্রদের সঙ্গে নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ জুলাই কোটা নিয়ে আদালতে চলা মামলার শুনানির দিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, এত কীসের আন্দোলন? সুপ্রিম কোর্ট–হাইকোর্ট কি আন্দোলন দেখে বিচার করবে? প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন আরও বেগবান হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২২ জুলাই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৫ ও অন্যান্য ২ শতাংশ কোটা রেখে রায় দেন। তবে এর আগেই ১৬ ও ১৭ জুলাই কোটা আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বাচরে গুলি চলে। এতে শতশত শিক্ষার্থী শাহাদাত বরণ করেন। আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ছাত্ররা এক দফা দাবি তোলেন। তারা সরকারের পদত্যাগ চান। এক পর্যায়ে সরকার কারফিউয়ের মতো কর্মসূচি ও চরম বলপ্রয়োগ করেও টিকতে পারেনি। ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সরকারের বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পদেত্যাগের দাবি ওঠে। পদত্যাগ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগেরও জোর দাবি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি বিচারপতিদের কেউ। পদত্যাগ না করে শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় বিচারপতিদের নিয়ে ভার্চুয়াল ফুল কোর্ট সভা ডাকেন প্রধান বিচারপতি। ফুল কোর্ট সভা ডাকার খবর পেয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক ফেসবুক পোস্টে প্রধান বিচারপতিকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানান। আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ও নানা অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছে। পরাজিত শক্তির যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন। আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উসকানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন। ’ এই ঘোষণার পরপরই ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধের ঘোষণা আসে কোর্ট প্রশাসন থেকে। শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানান। এদিকে ছাত্ররা শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টে আসা শুরু করেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের ঢল নেমেছে। আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পারন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

Share.