ডেস্ক রিপোর্ট: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে মার্কিন ইতিহাসে মাত্র ১০ জন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তাদের দলের মনোনয়ন পেয়েও পুনর্নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলের মনোনয়ন পেয়েও পুনর্নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ডেমোক্রেটিক নেতা জো বাইডেনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর ফলে প্রায় তিন দশকের মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যিনি পুনর্নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হলেন।
জন অ্যাডামস (১৭৯৭-১৮০১) যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ১৮০০ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদ জিততে ব্যর্থ হন। অ্যাডামস যিনি একজন ফেডারালিস্ট, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান থমাস জেফারসনের কাছে পরাজিত হন। দুইটি রাজনৈতিক দলের সদস্যের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের এটাই প্রথম ঘটনা। যদিও অ্যাডামস ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি নির্বাচনের ফল মেনে নেন এবং পদত্যাগ করেন। এর মাধ্যমে অন্যদের জন্য নজির সৃষ্টি করেন তিনি। জেফারসনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি অ্যাডামস। জন কুইন্সি অ্যাডামস (১৮২৫-১৮২৯) প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামসের ছেলে জন কুইন্সি অ্যাডামসও ১৮২৮ সালে পুনর্নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন। তিনি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের কাছে পরাজিত হন। জ্যাকসন বেশি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া সত্ত্বেও ১৮২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হন অ্যাডামস। কোনও প্রার্থীই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট না পাওয়ায় বিষয়টি প্রতিনিধি পরিষদে গড়ায়। শেষপর্যন্ত তারা অ্যাডামসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।
মার্টিন ভ্যান বিউরেন (১৮৩৭-১৮৪১) ১৮৪০ সালের নির্বাচনে উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনের কাছে হেরে যান মার্টিন ভ্যান বিউরেন। ভ্যান বিউরেনের চার বছর অর্থনৈতিক সংকট এবং যুদ্ধের মধ্য দিয়েই কেটেছে। সেই নির্বাচন বিশাল জয় পেয়েছিলেন হ্যারিসন। তিনি ২৪০টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন। আর ভ্যান বিউরেন পেয়েছিলেন মাত্র ৬০টি।
গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড (১৮৮৫-১৮৮৯) বেঞ্জামিন হ্যারিসনের কাছে ১৮৮৮ সালের নির্বাচনে হেরে যান গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। হ্যারিসনের চেয়ে এক লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যান ক্লিভল্যান্ড। মার্কিন ইতিহাসে এটাই ছিল দ্বিতীয় ঘটনা যেখানে একজন প্রার্থী পপুলার ভোট বেশি পেয়েও হেরে যান। যদিও ক্লিভল্যান্ড ১৮৯২ সালে আবার নির্বাচন করেন এবং হ্যারিসনকে পরাজিত করেন। তবে ক্ষমতায় থেকেও দ্বিতীয়বার জিততে না পারা প্রেসিডেন্টদের তালিকায় ক্লিভল্যান্ডকে ধরা হয়।
বেঞ্জামিন হ্যারিসন (১৮৮৯-১৮৯৩) পপুলার ভোটে হেরে গিয়েও ১৮৮৮ সালের নির্বাচনে গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড পরাজিত করেন বেঞ্জামিন হ্যারিসন। মাত্র একবার ক্ষমতা থাকতে পেরেছিলেন হ্যারিসন। ১৮৯২ সালের নির্বাচনে তিনি ক্লিভল্যান্ডের কাছে হেরে যান। বেশ কিছু অজনপ্রিয় কাজের কারণে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন হ্যারিসন।
উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট (১৯০৯-১৯১৩) পুনর্নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে ১৯১২ সালে পরাজিত হন উইলিয়াম হাওয়ার্ড ট্যাফট। এ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন উড্রো উইলসন। রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ট্যাফট দলের মধ্যে বিভক্তির শিকার হন। ফলে নির্বাচনে ভোট ভাগ হয়ে যায় ট্যাফট ও থিয়োডর রুজভেল্টের মধ্যে। এতে জিতে যান আরেক প্রার্থী উড্রো উইলসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে হেরে গেলেও শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও ছিলেন ট্যাফট।
হারবার্ট হুভার (১৯২৯-১৯৩৩) ১৯৩২ সালের নির্বাচনে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের কাছে হেরে যান হারবার্ট হুভার। তখন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। কিন্তু হুভার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হন। তাই ১৯৩২ সালের নির্বাচনে হুভারকে সহজেই হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন ডেমোক্রেটিক পার্টির রুজভেল্ট। নির্বাচনে হুভারের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পান রুজভেল্ট। আর ইলেকটোরাল ভোট পান ৪৭২টি। হুভার পান মাত্র ৫৯টি ইলেকটোরাল ভোট।
জেরাল্ড ফোর্ড (১৯৭৪-১৯৭৭) ১৯৭৬ সালে জিমি কার্টারের কাছে নির্বাচনে হেরে যান জেরাল্ড ফোর্ড। তিনিই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র অনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট হন ফোর্ড। এরপর ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে ফোর্ডকে ১৬ লাখ ভোটে হারিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির কার্টার প্রেসিডেন্ট হন। নির্বাচনে কার্টার পান ২৯৭টি ইলেকটোরাল ভোট। আর ফোর্ড পান ২৪০টি।
জিমি কার্টার (১৯৭৭-১৯৮১) রোনাল্ড রিগানের কাছে ১৯৮০ সালের নির্বাচনে হেরে যান জিমি কার্টার। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির কার্টারকে পরাজিত করেন রিপাবলিকান প্রার্থী রোনাল্ড রিগ্যান। কার্টার যে সময় পরাজিত হন, সে সময় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা ছিল চরমে। ১৯৮০ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে কয়েক ডজন মার্কিনিকে জিম্মি করা হয়। ৪৪৪ দিনের সংকটের পর ২০ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে ওই জিম্মি অবস্থার অবসান ঘটে। ওইদিনই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রিগান। কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ব্যর্থ হলেও প্রেসিডেন্ট পরবর্তী সময়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন কার্টার। এমনকি ২০০২ সালে শান্তিতে নোবেলও পান তিনি।
জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ (১৯৮৯-১৯৯৩) রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট বুশ ১৯৯২ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির বিল ক্লিনটনের কাছে হেরে যান। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, যুদ্ধ নায়ক এবং সিআইএ’র সাবেক পরিচালক বুশ ফলাফলের পর পরাজয় স্বীকারও করে নেন। তখন তিনি বলেছিলেন, জনগণ তাদের রায় দিয়েছে। ২০১৮ সালে মারা যান সিনিয়র বুশ।