শনিবার, নভেম্বর ২৩

বরিশালে সেই ঘটনার আগেই বদলি ইউএনও-ওসি

0

ঢাকা অফিস: বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষ পরবর্তী ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এবং প্রশাসন-পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। পরে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে গত ২২ আগস্ট রাতে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতাও হয়। কিন্তু এরপরই ইউএনও এবং ওসির বদলির খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পোস্টে বলা হয়,  সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাস্তিস্বরূপ ইউএনও এবং ওসিকে বদলি করা হয়েছে। তবে এক প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওই দুই কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়েছে। এরসঙ্গে ১৮ আগস্ট রাতের সংঘর্ষ বা পরবর্তী ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।প্রজ্ঞাপন দুটির একটিতে দেখা যায়, গত ১০ আগস্ট প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখার প্রজ্ঞাপনে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমানকে একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখার উপ-সচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। জনস্বার্থে এই বদলি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে, গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়াটার্সের এক প্রজ্ঞাপনে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ২৫ আগস্টের মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে বলা হয়। বদলির আদেশ হাতে পাওয়ার পরও ইউএনও বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছিলেন। ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের ব্যানার-বিলবোর্ড অপসারণ করতে যান। এ সময় ইউএনওর বাসভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে ইউএনওকে বিষয়টি অবহিত করেন। সেখানে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস জানান, ইউএনও ভবন থেকে বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তখন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বিষয়টি তাৎক্ষণিক সিটি মেয়রকে অবহিত করেন। মেয়র বিষয়টি সুরাহার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুসহ বেশ কয়েকজনকে সেখানে পাঠান। এরপর বাবুর সাথেও দুর্ব্যবহার করেন ইউএনও। উপস্থিতরা এর প্রতিবাদ জানালে আনসারদের গুলি করার নির্দেশ দেন ইউএনও। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।খবর পেয়ে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সেখানে গেলে তাকে লক্ষ্য করেও আনসার সদস্যরা গুলি করে বলে অভিযোগ করেন স্বপন কুমার দাস। এরপর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় ১৯ আগস্ট ইউএনও এবং পুলিশ বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এর ৫ দিনের ব্যবধানে গুলিবিদ্ধ প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন এবং সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার বাদী হয়ে ইউএনওকে প্রধান আসামি করে আদালতে মামলা করেন। পরে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে ২২ আগস্ট রাতে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। বদলি প্রসঙ্গে আলাপকালে ইউএনও মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমি বদলির আদেশ পেয়েছি ১০ আগস্ট। ১৮ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে আমার বদলির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। অপরদিকে কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঠোফোনে বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৩টায় আমি পুলিশ হেডকোয়াটার্সের বদলির আদেশ হাতে পাই। ঘটনা ঘটে ওইদিন রাত সাড়ে ১০টায়। ওই ঘটনার সঙ্গে আমার বদলির কোনো সম্পর্ক নেই। 

Share.