ডেস্ক রিপোর্ট: আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের সচিবালয় ‘নবান্ন’তে আয়োজিত একটি প্রশাসনিক নিরীক্ষা বৈঠকে সোমবার মমতা এ বিষয়ে কথা বলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতার অভিযোগ, হাসপাতালের ঘটনার সুযোগ নিয়ে সারা বিশ্বে তার রাজ্যের ‘বদনাম’ করা হচ্ছে। শিক্ষানবিশ ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর কলকাতায় বিচারের দাবিতে রাজপথে নামেন সেখানকার প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিচারে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন মমতার পদত্যাগ দাবি করছে। এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের ঘটনারও তুলনা করা হচ্ছে ভারতে। সেই প্রসঙ্গ ধরে বৈঠকে মমতা বলেন, “তাদের বোঝা উচিত, বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র। ভারত আলাদা রাষ্ট্র। এটি আপনারা মাথায় রাখতে ভুলে গিয়েছেন। বাংলাদেশ একটি অন্য রাষ্ট্র, তাদের আমরা সম্মান করি। তাদের ভাষাকে সম্মান করি। এখানে বাংলাদেশ হবে না।” বিদেশে বসে একটি নির্দিষ্ট মহল তৃণমূলের সমালোচনা করছে মন্তব্য করে মমতা বলেন, “একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ জুটেছে। যারা এখান থেকে পড়াশোনা করে, খেয়েদেয়ে, মানুষ হয়ে বাইরে গিয়েছেন, তারা একতরফা কথা শুনে বাংলার বদনাম করছেন। তারা তো দুপক্ষকে শুনতে পারছেন না।” এদিকে আর জি কর কাণ্ডের বিচার না হওয়ায়, আসছে দুর্গাপূজা উদযাপন না করার জন্য সোশাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু হয়েছে। এই প্রচারের বিরোধিতা করে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতিদিন রাতে আপনারা যদি রাস্তায় থাকেন, অনেক মানুষের তো সমস্যা হয়। অনেক এলাকায় অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন। আলো লাগালে, তাদের ঘুমের সমস্যা হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মও রয়েছে রাত ১০টার পর মাইক বাজানো নিয়ে। তা সত্ত্বেও তো আমরা সব ছেড়ে দিয়েছি। “এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পূজায় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, তাড়াতাড়ি বিচারের ব্যবস্থা করুন।” এছাড়া মাথা ঠাণ্ডা রেখে এবং সতর্কতার সাথে প্রশাসন চালাতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সংকট সুরাহায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতেও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন। পুলিশ চলমান আন্দোলন ‘ভালো সামলেছে’ মন্তব্য করে এ বাহিনীরও প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার সমস্যা কী পুলিশ দেখবে না? ভাগ্যিস পুলিশ এই কটা দিন সামলেছে। শান্তিপূর্ণ থেকেছে। মার খেয়েছে। নিজেদের রক্ত দিয়েছে, কিন্তু কারও রক্ত নেয়নি। কিন্তু মনে রাখবেন, পুলিশেরও সংসার আছে, তাদেরও পরিবার আছে। কিন্তু পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বারণ করেছি।” এদিকে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সোমবার তৃতীয় দিনের মত শুনানি হয় দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। শুনানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা-সিবিআই বলেছে, পুলিশের ফরেনসিক প্রতিবেদন তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই এ ঘটনায় যতটুকু নমুনা সংরক্ষিত আছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এইমস) এবং ভারতের পুনেসহ একাধিক জায়গায় সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করতে চায় তারা। সিবিআইয়ের এই আবেদনে সম্মতি এসেছে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ থেকে। দেড় ঘণ্টার শুনানি শেষে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ রেখেছে আদালত।
বাংলাদেশ একটি অন্য রাষ্ট্র, তাদের আমরা সম্মান করি: মমতা
0
Share.