ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের ঐতিহাসিক বারবি মসজিদ-রাম মন্দির ভূমি বিরোধ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর করা পুনর্বিবেচনার সব আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চের চেম্বার আদালতে উত্থাপিত সব আবেদন খারিজ করা হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এখবর জানা গেছে। শতাব্দী প্রাচীন বিরোধের আইনি নিষ্পত্তি টেনে ৯ নভেম্বর অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বলা হয়, বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে গড়ে উঠবে রাম মন্দির। আর এর পরিবর্তে অযোধ্যার যেকোনও স্থানে মসজিদের জন্য বরাদ্দ করা হবে ৫ একর জমি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পড়ে ১৮টি। আবেদনকারীদের মধ্যে মূল মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ৯টি আবেদন পড়ে। আর ৯টি আবেদন করে ৪০ মানবাধিকারকর্মীর তৃতীয়পক্ষ। মামলার মূল দুই পক্ষ হলো অল ইন্ডিয়া মুসলিমস পারসোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) ও নির্মোহি আখড়া। ভারতের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘পুনর্বিবেচনার জন্য নথিভুক্ত করার আবেদনগুলো খারিজ করা হয়েছে। পর্যালোচনার আবেদনগুলো ও এর সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রগুলো সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করেছি আমরা। এরপর ওই মামলা চলার মতো কোনও ভিত্তি না থাকায় পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলো খারিজ করা হয়েছে।’ সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, তৃতীয় পক্ষ তথা অধিকারকর্মীরা মূল বাবরি মসজিদ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় তাদের আবেদনগুলোর অন্তর্ভুক্তির অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। আবেদনগুলো খারিজের পাশাপাশি বিভিন্ন পক্ষের উন্মুক্ত আদালতে শুনানির আবেদনগুলোও বাতিল হয়েছে। রায় পুনর্বিবেচনা আবেদনকারী এআইএমপিএলবি’র যুক্তি হচ্ছে, ‘বাবরি মসজিদে মূর্তি যে জোর করে বসানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট সেটা মেনে নিয়েছেন। হিন্দু শাস্ত্র মতে ওই মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়নি। তাই রাম লালা জমির মালিকানা দাবি করতে পারে না।’ এ ছাড়া মুসলিমদের পক্ষে আরও কয়েকটি আপিল করা হয়েছে। তাদের এক পক্ষের দাবি, ‘বেআইনীভাবে ধ্বংস করা, ফৌজদারি অনুপ্রবেশ, আইনভঙ্গ এবং মসজিদের ক্ষতিসাধন ও ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।’ আবার অন্য একটি পক্ষের বক্তব্য, তারা শান্তি ভঙ্গ করতে চান না। তারা সব সময়ই শান্তিরক্ষা করেছেন। তবে সবসময়ই অশান্তি ও অবিচারের শিকার হয়েছেন তারা। তাই সুবিচার পেতেই তারা পুনর্বিবেচনার আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এর পাশাপাশি নির্মোহি আখড়াও একটি আবেদন দায়ের করেছিল। মূল মামলাতেও অন্যতম পক্ষ ছিল তারা। কীভাবে রামমন্দির তৈরি হবে বা মুসলিমদের জমি দেওয়া হবে, তা নিয়ে সরকারকে একটি ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই ট্রাস্টে নির্মোহি আখড়ার কতজন থাকবে, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। যদিও সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছিল, নির্মোহি আখড়ার ‘পর্যাপ্ত প্রতিনিধি’ রাখতে হবে ট্রাস্টে। তবে সেই ‘পর্যাপ্ত’ সংখ্যার অর্থই স্পষ্ট জানতে চেয়ে আবেদন করেন আখড়ার প্রতিনিধিরা।