ঢাকা অফিস: একদিকে ক্লাশ চলছে, আরেকদিকে চলছে পশুর কেনা-বেচা। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কদমতলি হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ৩৫ বছর ধরে সপ্তাহের প্রতি রোববার গবাদিপশুর হাট বসে। পশুর হাট বসার কারণে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রায় সাতশ’ শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেসে কদমতলী এলাকায় ১৯৭২ সালে কদমতলি হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টিতে প্রায় সাতশ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ১৯৮৫ সাল থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে সপ্তাহের প্রতি রোববার পশুর হাট বসা শুরু হয়। এই এক দিনের জের থাকে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও। সারা মাঠজুড়েই গরু, ছাগলের বর্জ্য ও রকমারি গর্ত, নালা-নর্দমার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রেণিকক্ষের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পশুর মল ও খড়কুটোর স্তুপ। ফলে হাটের পরদিন সোমবার স্কুল খুললেই শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমতো কষ্টকর হয়ে উঠছে স্কুলে আসা। খেলাধুলা তো দূরের কথা, মাঠ পার হয়ে স্কুলের বারান্দাতেও স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, এই এলাকার সবচেয়ে বড় পশুর হাট ওই কদমতলি স্কুল মাঠ। যে কারণে অনেক গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া ওই হাটে কেনা বেচা হয়। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। কদমতলি হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র মিয়াদ জানায়, মাঠের মধ্যে কাঁদা থাকায় তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। ১০ম শ্রেণির ছাত্র সানোয়ার হোসেন সানি জানায়, কাঁদা ও পশুর মলের দুর্গন্ধে ক্লাসে থাকা খুব কঠিন। এ বিষয়ে কদমতলি হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম¥দ আলী জিন্নাহ জানান, বিগত ১৯৮৫ সালে কদমতলী হাটটি স্কুলের মাঠে প্রতিষ্ঠিত হয়। হাট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বসছে। এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে হাট পরিচালনা করে। বিগত ২০১৫ সালের ৪ মার্চ হাট স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টির অগ্রগতি এখনও হয়নি। এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে ওই বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বসছে। সামনে বাংলা সনের ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়াও হয়েছে। হাটের কারণে বিদ্যালয়ের কোনো অসুবিধা হয়, এমন অভিযোগ কেউ করেননি। তবে ওই বিদ্যালয়ের অদূরে একটি খাসজমি হাটের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু তা অন্যদের দখলে রয়েছে। তাই সেখানে হাট স্থানান্তর করা যায়নি। এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, স্কুলের মাঠে গরুর হাটটি অন্যত্র সড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। যে পর্যন্ত সড়িয়ে নেয়া সম্ভব না হবে সে পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হাট বসানোর চেষ্টা করছি।
বিদ্যালয়ের মাঠে ৩৫ বছর ধরে পশুর হাট: শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
0
Share.