ঢাকা অফিস: জাতির সূর্য সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ভোর থেকেই রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত। শহীদদের স্মরণ করার পর সাধারণ মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা স্বপ্ন দেখছেন একটি আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। তারা বলছেন, ‘এবার আর আক্ষেপ নয়, পেছনে তাকানো নয়, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার।’ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যারা এসেছেন তারা বলেন, ‘দেশের প্রতি ত্যাগের মাধ্যমেই বড় হওয়া যায়, এটাই তারা শিখিয়েছেন। স্বাধীনতার এতদিন পরও আমরা রাজাকারমুক্ত হতে পরিনি। এখন আমাদের রাজাকারমুক্ত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পালা।’ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে এদেশের দোসরদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ হাজারো বুদ্ধিজীবীকে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে।
রাষ্ট্রপতির বাণী :
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিব্স উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “১৪ ডিসেম্বর জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে এ এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।” স্বাধীনতা যুদ্ধে নানাভাবে অবদান রেখে যাওয়া বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। “জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদান-সহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রাখেন।” রাষ্ট্রপতি বলেন, একাত্তরে বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবীদের হারানো ছিল জাতির জন্য ‘এক অপূরণীয় ক্ষতি’। “শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের পথ বেয়ে বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হলেই তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর বাণী :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, “আজ ১৪ই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন। “মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসররা পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।” শহীদ সেই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাসহ আরো অনেকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য।” মুক্তিযুদ্ধের সেই পরাজিত শক্তিই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে এবং পরে দেশের মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায় বলে বাণীতে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস চালায়। এখনও তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে।”বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের কয়েকজনের সাজা কার্যকর করেছে বাংলাদেশ। আরও বেশ কয়েকজনের বিচার চলছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে।” দল-মত নির্বিশেষে গোটা জাতিকে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামাতচক্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।