ঢাকা অফিস: আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। ‘দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ সম্মান দুই-ই মেলে’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার দক্ষতা উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের প্রেক্ষিতে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে ফেলে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে জাতিসংঘ। এরই প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটসসহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
রেমিট্যান্স অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি: রাষ্ট্রপতি
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদ্যমান শ্রমবাজারসমূহ সুসংহত ও নতুন নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ । দিবসটি উপলক্ষে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।এক বাণী রাষ্ট্রপতি বলেছেন, অভিবাসী কর্মীরা দেশের গর্ব। বিপুল সংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তারাও গর্বিত অংশীদার। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে। প্রতিযোগিতামূলক এ শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের মাধ্যমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’র সুফল কাজে লাগাতে হবে।
দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আশা করি, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান হতে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করবেন।শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসীদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বিশ্বময় সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। আমাদের সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
মন্ত্রণালয়ের দিনব্যাপী আয়োজন: দিবসটি উদযাপনে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে প্রথম পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন’র বাংলাদেশ মিশন প্রধান গর্গিও গিগাউরি। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা। এর আগে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় মানিক মিয়া এভিনিউতে বের হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি। দিনব্যাপী উদযাপনের মধ্যে আরও অনাবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সিআইপি সম্মাননা প্রদান। এই অনুষ্ঠানে ১৪টি দেশের ৪২ জন প্রবাসীকে সিআইপি সম্মাননা দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিমা পলিসি হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীর বিমা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এছাড়া প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি তুলে দিবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি বঙ্গবন্ধু কর্নার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে মেলায়। প্রকাশ করা হবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
অভিবাসন সেবা সপ্তাহ ঘোষণা ব্র্যাকের: অভিবাসন সেবা সপ্তাহ ঘোষণা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। সেবা সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে ১৮ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে উদযাপিত আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস র্যালিসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের র্যালিতে অংশগ্রহণ করবে সংস্থাটি। একই দিনে দেশের অভিবাসনপ্রবণ ১০টি জেলায় আয়োজন করা হয়েছে অভিবাসন মেলা। দিনব্যাপী এই মেলায় সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বিমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় পর্যায়ের সমমনা এনজিও, সেবাগ্রহীতা, বিদেশ ফেরত অভিবাসী, সম্ভাব্য অভিবাসী, বিভিন্ন ট্রেড ও কোর্সের উপর দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (সরকারি ও বেসরকারি টিটিসি), চাকুরি প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, চাকুরি প্রত্যাশী ব্যাক্তি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবেন। নানা কর্মসূচির পাশাপাশি এ সপ্তাহে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অভিবাসীদের বিভিন্ন ধরনের জরুরি সেবা দেওয়া হবে। ২৪ ডিসেম্বর ‘নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং টেকসই পুনরেকত্রীকরণ’ এর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অভিবাসন সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহনে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার। ১৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়ভাবে উদযাপিত অনুষ্ঠানে অভিবাসন বিষয়ে নানা সেবা প্রদানের জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে দুটি স্টল স্থাপন করা হবে। এছাড়া ২০, ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর দেশের ১০টি জেলার ৬০টি উপজেলায় নিরাপদ অভিবাসন এবং বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণের ওপর সচেতনতামূলক গণনাটক, পট গান, ভিডিও শো প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।