ঢাকা অফিস: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ভারত ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৪৭ জন। এ সময় ভ্রমণ খাতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।এদিকে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় চিকিৎসা সেবায় মানুষ কিছুটা উপকৃত হলেও ভারতে যেতে না পারায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক খাতে।বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, দেড় বছর ধরে চলা করোনার বিরূপ প্রভাবে নানান বিধি-নিষেধে কমেছে যাত্রী চলাচল। করোনা প্রভাব কাটলে আবার স্বাভাবিক হবে ভ্রমণ খাত।জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর হয়ে প্রতিবছর চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা আর ভ্রমণে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। যা থেকে বছরে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে। কিন্তু গেল বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ভারত ও বাংলাদেশে। এতে সংক্রমণ রোধে গত বছরের ১৩ মার্চ ভারত সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে বাংলাদেশিদের ভারত যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে গত বছরের ১৫ আগস্ট ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে স্বল্প পরিসরে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা চালু করে ভারত। চলতি বছরে ভারতে আবারও করোনা সংক্রমণ মহামারী অবস্থা ধারণ করলে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার ভারত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে আবারও যাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে শুধুমাত্র মুমূর্ষু রোগীদের জন্য সীমিত পরিসরে মেডিকেল ভিসা চালু রয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় মারাত্মক হারে কমেছে যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ রোধে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।বর্তমানে সপ্তাহে তিন দিন শনিবার, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ভারতে যাওয়া যাবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সচল থাকছে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম।আমদানিকারক উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, স্থলপথে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। পণ্য আমদানি, রফতানি করতে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নানা বিধি-নিষেধে ইচ্ছা করলে ভারতে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। এতে অনেকে চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারেন নি।ভারতগামী যাত্রী আকলিমা বেগম জানান, করোনার মধ্যে জরুরি চিকিৎসায় ভারতে যেতে হচ্ছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি ভাল না হলে ফিরবো না এমন প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে সরকারকে। এছাড়া নানান শর্তও মানতে হচ্ছে।বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দীন জানান, বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতে যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর থেকে পরীক্ষা করানো কোভিড নেগেটিভ সনদ প্রয়োজন হচ্ছে। যারা ভারত থেকে ফিরছেন তাদেরকে ১৪ দিনের জন্য স্থানীয় আবাসিক হোটেলে ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংক্রমণ ঝুঁকি মুক্ত হলে যাত্রীরা বাড়ি ফিরতে পারবেন।বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব সময় নিউজকে জানান, করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে এ পথে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বিধি-নিষেধে প্রতিদিন যাত্রী যাতায়াতের কমে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ১০০ জনে। সাধারণ যাত্রীদের ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। তবে যাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র আছে তারা শর্তসাপেক্ষে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক(ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত অর্থবছরের চেয়ে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত ভ্রমণে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমেছে ৮লাখ ৩২ হাজার ৬৪৭ জন। এ সময় ভ্রমণ খাতে রাজস্ব ঘটতি হয়েছে ৪১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।
বেনাপোল বন্দর: ভ্রমণ খাতে ৪২ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি
0
Share.