বাংলাদেশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছর লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এমন ফলন হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাজারগুলোতে পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে এই লিচু। দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় খুশি বাগান মালিক ও ক্রেতারা। এদিকে লিচু পাকতে শুরু করায় ও বাগানগুলোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক মানুষ গিয়ে লিচু বাগানে ভিড় করছেন। লিচু বাগানে তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। ফেরার সময় কিনে নিয়ে আসছেন লিচু। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মোট ৫৪৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় ৪১৪ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ১৪ হেক্টর, নাসিরনগর উপজেলায় ৩ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ১ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ১ হেক্টর ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলায়। বিজয়নগর উপজেলার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে রয়েছে এই লিচুর আলাদা কদর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে বিজয়নগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ করা শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এখানকার ধানি জমিগুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করতে থাকেন চাষিরা। বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটিদাউপুর এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশী লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই একটি লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতে একটু জায়গা আছে, তারা প্রত্যেকেই বাড়িতে অন্যান্য ফলের গাছের সাথে লিচু গাছ লাগান। এলাকাবাসী ও চাষীরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কেনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়। বিজয়নগর উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে উপজেলার আউলিয়া বাজার। এছাড়াও উপজেলার মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল বাজার, আমতলী বাজারসহ আরো কয়েকটি বাজারে পাইকারীভাবে লিচু বেচা-কেনা হয়। প্রতিদিন ভোর রাত ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব বাজারে লিচু বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন উপজেলার আউলিয়া বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যায়। উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাগান মালিক মাসুদ মিয়া বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, তার বাগানে এবার যে লিচু ধরেছে তিনি এই লিচু প্রায় ৮ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জায়গায় তিনি লিচুর আবাদ করবেন। একই এলাকার মো. মুখলেছুর রহমান প্রকাশ আবু তালহা নামে আরেক বাগান মালিক বলেন, বিগত বছর থেকে তিনি বাগানে বেশ পরিচর্যা করেছেন। এজন্য এবছর তার বাগারে লিচুর খুবই ভালো ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সহযোগীতা পেলে বিজয়নগরে তার মতো অনেকেই লিচুর বাগান করতে এগিয়ে আসবে। আখাউড়া সড়ক বাজার এলাকার লিচু বিক্রেতা মোবারক মিয়া বলেন, প্রতিবছর তিনি বিজয়নগর থেকে লিচু কিনে আখাউড়ায় নিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, আমরা বাগান থেকে প্রতি হাজার লিচু ২৩০০ টাকায় কিনে আখাউড়ায় নিয়ে ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে লিচুর দাম কম। তাই ক্রেতারাও খুশী। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, মাটি ও আবহাওয়ার কথা চিন্তা করলে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এর মধ্যে বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় অধিকাংশ লিচু বাগান রয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লিচুর মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে চাষীদের সব ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে কমপক্ষে ২৭৫০ মে. টন লিচুর ফলন হবে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২৯ কোটি টাকা।