বয়স বাড়লেও ফিট থাকতে বাধা নেই

0

স্বাস্থ্য ডেস্ক: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলের হানাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। উচ্চ রক্তচাপও চোখ রাঙায়। সঙ্গে যোগ হয় মানসিক অবসাদ। সাংসারিক যে কাজ এক সময় খুবই ভাল লাগত, তা করতেও মন চায় না। এমন অনিচ্ছেকে নিমেষে ‘ইচ্ছে’-য় পরিণত করতে পারেন আপনিই। দরকার কিছু শারীরিক কসরত আর ব্যায়াম। মন, মাথা, মেজাজ সবই থাকবে আয়ত্তে। সারা বিশ্বেই যে সব বয়স্ক বুড়ো হাড়েও ভেল্কি দেখাচ্ছেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই নিত্য রুটিনে রেখেছেন ব্যায়াম। তা তিনি সুনীল গাভাস্কার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা অমিতাভ বাচ্চন, যে-ই হোন না কেন! অবসর জীবনে অবসাদ, অনিচ্ছা এই শব্দগুলোকে সরিয়ে ফেলুন মন থেকে। বরং ৬০-এর পরেই শুরু হোক জীবনকে অন্য ভাবে খোঁজা। হাঁটু-কোমর ঠিক রেখে বেড়ানো থেকে শুরু করে নিজের মনের মতো কাজই হোক অবসরযাপনের সঙ্গী। আর এই সব শখে ইন্ধন দিতে পারে সুস্থ শরীর ও মন। তাই তাদের প্রস্তুত করতে মন দিন শরীরচর্চায়। ৬০-এর বেশি বয়সে হাড়ের জোর কমে ও পেশীর ক্ষয় হয় দ্রুত। তাই ব্যায়ামের ব্যাকরণ অনুয়ায়ী বেশি বয়সের মানুষদের উচিত হাড়ের জোর বাড়ানোর ব্যায়ামে বেশি জোর দেওয়া। তা বলে যে জিমে যেতেই হবে এমন কোনও মানে নেই কিন্তু! বরং কিছু সামান্য উপাদানে বাড়িতেই সারতে পারেন এমন শরীরচর্চা।

কী কী ব্যায়ামে মুক্তি?

১। এক পায়ে ব্রিজ: মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে দু’হাঁটু ৯০ ডিগ্রি মু়ড়ে রাখুন। এ বার কোমর মাটি থেকে তুলে একটা পা শূন্যে তুলে ধরুন। অন্য পায়ের জোরে কোমরটা ধরে থাকুন। এই পদ্ধতিতে দু’পায়ে ১০ সেকেন্ড করে বার ছ’য়েক করুন এই ব্যায়াম। এতে হাঁটুর জোর বাড়বে। এই ভাবে এক মাস করার পর ১০ সেকেন্ডের সময় বাড়িয়ে ৩০ সেকেন্ড করুন। তা করতে পারলে খেলার সরঞ্জামের দোকান থেকে একটা সুইস বল কিনুন। এই বিরাট আকারের বল ব্যায়ামের দারুণ সরঞ্জাম। এ বার এই সুইস বলে ভর দিয়ে করুন ব্রিজ।

২। টিউব নিয়ে ব্যায়াম: ইলাস্টিক বা রাবারের টিউব বা সাইকেলের টিউব নিন। একটা গ্রিলে লাগিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে টিউবটা নাভি বরাবর সামনের দিকে নিন আর ফের নাভির দিকে ফেরত আনুন। এক পাশে মোট ১২ বার করার পর ফের চেষ্টা করুন অন্য পাশে। সে পাশেও করুন ১২ বার। প্রতি পাশে পর পর ৩ বার করুন। এই ব্যায়ামের ফলে পেটের পেশীর জোর বাড়ে। এক মাসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে খেলার সরঞ্জামের দোকান থেকে একটি রেজিস্ট্যান্স টিউব কিনে নিন।

৩।  স্টেপ আপ: হাঁটুতে কোনও বড় ধরনের অসুখ না থাকলে অর্থাৎ সিঁড়ি ভাঙা একেবারে বারণ না হলে সিঁড়ি ভাঙার অভ্যাস কিন্তু বজায় রাখতে হবে। হাতে দু’লিটারের জলভর্তি বোতল নিয়ে সিঁড়ির ধাপের সামনে প্রথমে বাঁ পা তুলে উঠুন। তার পর ওই পা নামিয়ে ডান পা তুলুন ও নামান। দু’ পা মিলিয়ে মোট ২৪ বার ওঠানামা হবে। ২৪ বারে একটি সেট হয়। তিন সেট অভ্যাস করুন। প্রতি সেটের মাঝে দু’ মিনিটের বিরাম নিন। এতে হাঁটুর পেশীর জোর বাড়বে। এক মাস ২ লিটারের জলের বোতল নিয়ে করার পর ২-৩ কেজির ডাম্বেল কিনে নিন দু’টি। বোতলের পরিবর্তে ডাম্বেল দিয়ে অভ্যাস করুন। ছোট ছোট পায়ে লক্ষ্য ম্যারাথন ঘরের বাইরে হাঁটা মানেই প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা। এতে মনমেজাজও ভাল থাকে। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে নানা রাসায়নিক পরিবর্তনও হয়। হাঁটার একঘেয়েমি কাটাতে এক এক দিন এক এক রাস্তায় হাঁটতে পারেন। আজকাল মোবাইলের নানা অ্যাপে দেখতে পাওয়া যায় কত পা কত মিনিটে হাঁটা হল। তেমনটা হিসেব রাখতে পারলে তো ভালই। এমন গতিতে হাঁটুন, যাতে ঘাম হয়। প্রথম তিন সপ্তাহ ১৫০০ পা হাঁটা হয়। এর পর ৪-৬ সপ্তাহ ২ হাজার পা হাঁটুন। দু’হাতে একটি করে এক লিটারের জলভর্তি বোতল নিয়ে হাঁটলে ৪-৬ সপ্তাহে ১০০০ পা হাঁটলেই যথেষ্ট। হাতে বোতল থাকলে ক্যালোরি ঝরবে বেশি। এক-দেড় মাস বাদে নিজের জন্য কিনে ফেলুন একটা ট্রেনিং শু এবং এক কেজি ওজনের রিস্ট ওয়েট। মোট হাঁটার সময় কিন্তু ১৫-২০ মিনিটের বেশি নয়। বেশি হাঁটলে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। এমন রুটিনের পর ওজন নিলে দেখবেন, শরীরের মেদ অনেকটাই ঝরেছে। জগিং করার মতো ফিট হলে এক-দেড় কিলোমিটার জগিং করুন। ট্রেনিং শু কেনার পরেই খেয়াল রাখুন কলকাতায় ম্যারাথনের দিন কবে। অল্প অল্প করে লক্ষ্যপূরণ করেই ম্যারাথনের দিকে এগোন। মেদ তো কমবেই, ৬০-এর পরে শরীরও থাকবে সুস্থ।

Share.