ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নানা বিধিনিষেধের মুখে সব ধরনের পরিবহনের চাহিদা কমে গিয়ে টালমাটাল জ্বালানির বাজার এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পড়ছে তেলের দাম।
যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীন অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ এবং চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতিতে ডলারের মূল্য নিম্নমুখী হচ্ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম মার্কিন ডলার সূচক ‘ডিএক্সওয়াই’ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। সোমবার দিনের শুরুতে দুর্বল ডলারের বিপরীতে বিশ্ববাজারে তেলের দামে সামান্য ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও পরে আবার তা ২ শতাংশ হ্রাস পায়।সোমবার সকাল ১০টায় (ইডিটি)যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ০ দশমিক ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪০ দশমিক ৯৭ মার্কিন ডলারে নেমে যায়। অন্যদিকে, ‘ব্রেন্ট ক্রুড (অপরিশোধিত তেল) এলসিওসি১’র দাম ব্যারেল প্রতি ০ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪২ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার হয়।বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় দফায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ায় মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি আরোপ এবং ভ্রমণে বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। ফলে বাণিজ্যিক বিমান চলাচল আবার হ্রাস পাচ্ছে, কমছে তেলের চাহিদা।অন্যদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ, করোনাভাইরাস মহামারী, হংকংয়ে চীনের নিরাপত্তা আইন জারির মতো বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিনের চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ পাল্টাপাল্টি কনস্যুলেট বন্ধের মধ্য দিয়ে চরমে উঠেছে।বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এ দুটি দেশের সম্পর্কের এই অবনতিতে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা এখন ঝুঁকি না নিয়ে সোনা বা বন্ডের মত নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তেলের দামে।চীনের সঙ্গে উত্তেজনা এবং করোনাভাইরাস মহামারী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় আঘাত হয়ে এসেছে। ভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই সব দেশকে পেছনে ফেলেছে। সেখানে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণও এখন পর্যন্ত নেই।শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতেই মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সংকট কাটিয়ে ইউরোপের কিছু দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও সেখানে নতুন করে আবার ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ বাড়ছে। নতুন করে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। যা অর্থনীতিতে নিশ্চিতভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।স্পেনে ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সম্প্রতি যুক্তরাজ্য দেশটিকে তাদের নিরাপদ ভ্রমণের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সেইসঙ্গে স্পেন ভ্রমণ করে যুক্তরাজ্যে ফিরলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আপাতত স্পেন ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।এশিয়ার দেশগুলোতেও সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হচ্ছে। অর্থনীতি বাঁচাতে অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করায় ভাইরাস বিস্তারের গতি এতটাই বেড়েছে যে কোথাও কোথাও নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে। ফলে কমছে তেলের চাহিদা।বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাজারে অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধিসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সফলতা ধরা দিচ্ছে না। অথচ, স্বাভাবিক নিয়মে মুদ্রাস্ফীতি হলে তেলের দামও বাড়ে।ইনভেসমেন্ট ব্যাংকিং কোম্পানি রেমন্ড জেমস এ বিশ্লেষকদের মতে, ‘‘বাজারে বড় আকারে সরকারি অর্থের প্রবেশ ঘটলে তেলের দামের উপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।”অতীতেও এমনটা দেখা গেছে, মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে তেলের মূল্যেও ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এবার বাজারে যে পরিমাণ সরকারি অর্থ ঢুকেছে তা নজিরবিহীন, বলছেন তারা।কিন্তু রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু বৃহৎ তেল রপ্তানিকারক দেশ নিজেদের তেল উৎপাদন বড় মাত্রায় হ্রাস করার পরও বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়াতে পারছে না।