বিনোদন প্রতিবেদকঃ ভায়োলেন্ট টেম্পার – বা রগচটা হিসেবে অশ্লীল সংলাপের জন্য পরিচিত কাজী হায়াৎ বার বার সাংবাদিকদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে জোড় হাতে ক্ষমা চেয়েছেন। মূলত তিনি বাজে আচরণের জন্য সংবাদ শিরোনাম হন বার বার। সম্প্রতি বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সাংবাদিক, গবেষক ও বাচসাসের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ তেপান্তরকে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালক সমিতির প্রাঙ্গণে ঢুকতে নিষেধ করে নোটিশ টানিয়ে আলোচনায় আসেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন খোদ তার সংগঠনের সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, সাবেক মহাপরিচালক, এফ আই মানিক, বদিউল আলম খোকন ছাড়াও সরবহন গুণী নির্মাতা এস এ হক অলিক ও খিজির হায়াত খান। এছাড়াও নিজ সহকর্মীদের ভর্ৎসনার শিকার হন এই পরিচালক। তবে তার দাবি মহাসচিব শাহীন সুমন তাকে যা বুঝিয়েছিলেন তিনি সে মতেই নিষিদ্ধের নোটিশে সাক্ষর করেন। এমনকি সেন্সরবোর্ডেও তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
অবস্থা যখন সাংবাদিক-পরিচালক সমিতি মুখোমুখি তখন বরেণ্য অভিনেত্রী রোজিনা তার প্রথম সিনেমা ‘ফিরে দেখা’র সংবাদ সম্মেলন করবেন পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ছাড়াই। ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- এ মুহূর্তে রোজিনার সাংবাদিক দরকার, তিনি কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাছাড়া যুগ যুগ সাংবাদিকদের কারণেই ভক্তরা তাকে মনে রেখেছে। তাই তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে শুধু সাংবাদিক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে এফডিসি ভেন্যু পরিবর্তন করেছেন। এমনকি এ নিয়ে কাজী হায়াৎকেও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
তবে অতীত ইতিহাস বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা সৃষ্টি করে ক্ষমা চাওয়ার সবচেয়ে বেশি নজির স্থাপন করেছেন ভায়োলেন্ট ট্যাম্পার হেডেড কাজী হায়াৎ।
এরআগে তিনি দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে শুধু নিজের সহকর্মীই নন, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মারমুখী আচরণ করেছেন। তিনি এতোটাই শর্ট টেম্পার যে, একবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানস্থলেই তিনি সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরীকে মারার জন্যে চড়াও হন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রসমালোচক মাহমুদা চৌধুরী নাকি বিশাল অন্যায় করে ফেলেছিলেন কাজী হায়াৎ নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের সমালোচনা করায়। ওই সময় মাহমুদা চৌধুরী সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত চিত্রসমালোচনা লিখতেন।
আরেকবার ২০০০ সালে সাভারের ফুলবাড়িয়ায় ডিপজলের ফাহিম শুটিং স্পটে ডিপজল প্রযোজিত একটি ছবির মহরতে ঢাকা থেকে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক রাকিব হাসান এর ওপর আকস্মিক চড়াও হন। উপস্থিত সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে কাজী হায়াৎ নিবৃত্ত হয়েও উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আমি কাজী হায়াত আছি বলেই তোমরা সাংবাদিকরা বউ বাচ্চাদের মুখে ভাত তুলে দিতে পারছো। তার এই ঔদ্ধত্য আচরণের পর সাংবাদিকরা ঢাকায় ফিরে এসে তাকে বয়কটের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে বাচসাস এর তৎকালীন সভাপতি রফিকুজ্জামানসহ পুরো কমিটির কাছে কাজী হায়াৎ করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বাচসাস এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির যৌথ ওই সভাটি খোদ পরিচালক সমিতিতেই অনুষ্ঠিত হয়।
এই ঘটনার আট বছর পর ২০০৮ সালের শুরুতে সিনিয়র চলচ্চিত্র সাংবাদিক তুষার আদিত্য’র সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। ওই ঘটনায় কাজী হায়াতের সহযোগী ছিলেন প্রয়াত তিন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন ও মোহাম্মদ হান্নান। এই চারজন চিত্রবাংলা পত্রিকার তৎকালীন প্রতিবেদক তুষার আদিত্য’র ওপর চড়াও হন তারই অফিস কম্পাউন্ডে। চার পরিচালকের সঙ্গে তুষার আদিত্য এবং তার অফিসের সিকিউরিটির লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অতঃপর ওই ঘটনায় কাজী হায়াত এবং প্রয়াত তিন পরিচালক হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রায় রেহাই পান।
একজন মনোবিদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে জানা যায়- ভায়োলেন্ট ট্যাম্পার হেডেড একটি মানসিক রোগের নাম। এই রোগের বাংলা অর্থের সঙ্গে সবাই পরিচিত, রগচটা। রগচটা রোগীর সাধারণ উপসর্গ হলো – হুটহাট উত্তেজিত হওয়া, অল্প কথায় রাগ হওয়া, মানুষকে গালিগালাজ করা এবং রাগের বহিঃপ্রকাশ মানুষ কে মারতে যাওয়া। এমনকী এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা তার পরিবার পরিজনও বকাবকি ও শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন। আমাদের সমাজে ভায়োলেন্ট টেম্পার রোগী প্রচুর দেখা যায়। দেশের শিল্প – সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াত সময়ের উপযোগী নাম।
এ অবস্থায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকর্মীদের অনেকেই সমিতির চলতি দায়িত্ব থেকে কাজী হায়াৎকে অবসরে পাঠানোর প্রস্তাবও তারা করবেন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। একই সঙ্গে শাহীন সুমনকেও তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনায় দায়ী করে বহিস্কারের চিন্তা করছেন বলে খবর এসেছে। তবে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মাথা ব্যথা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিনোদন সাংবাদিকদের সিনিয়র কয়েকজন বলেন- ওখানে কে কাকে বহিস্কার করবে বা করবে না এটা তাদের ব্যাপার। আমরা চাই সিনিয়র সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তরের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সেটার জন্য তারা অনুতপ্ত হবে, এটাই।