ঢাকা অফিস: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে জানিয়েছেন, জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনআরসি) পরিকল্পনা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এনআরসি ইস্যুতে বাংলদেশের ওপর কোন অযাচিত প্রভাব পড়বে না সে নিশ্চয়তা ভারত সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশীসুলভ সুসম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকার তাদের বিভিন্ন প্রদেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনআরসি) পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে মনে করে। একইভাবে বিলটিকে ঘিরে গড়ে ওঠা বির্তককে ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ভারত সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে তাদের দৃঢ় পারস্পরিক বিশ্বাস, সৌহার্দ্য ও বোঝাপড়ার প্রতি পূর্ণমনোযোগ দেবে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। একই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে উত্তরোত্তর জিডিপি বৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতে অবৈধ অভিবাসনের কোন অর্থনৈতিক অনুপ্রেরণাবোধের যৌক্তিকতা নেই। তারপরও সীমান্তে অবৈধ গমনাগমন, চোরাচালান প্রতিরোধসহ সীমান্তবর্তী অপরাধ দমনে সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্বদাই সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে। বিজিবি সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধসহ যে কোন ধরনের বৈআইনী কর্মকান্ড প্রতিরোধে সদা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছে। এরপরও উদ্বেগজনক কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সীমান্তে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান জানান, সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে যাতে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে বিজিবি’র অধিনস্থ রিজিয়ন, সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন কর্তৃক সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদারসহ গোয়েন্দা ও সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সীমান্তের ৮ কিলোমিটারের বাইরেও প্রয়োজনে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি আরো জানান, সীমান্ত রক্ষা তথা চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তে ৬৯৭টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। বিওপিসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ১২৮টি বর্ডার সেন্ট্রি পোস্ট (বিএসপি) তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে স্থানীয় জনগণের মধ্যে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি কর্তৃক নিয়মিত প্রেষণ প্রদান করা হচ্ছে। বিএনপি’র সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, স্বশস্ত্র গ্রুপগুলো পার্বত্য এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও মতবিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায়শই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ভারতের এনআরসি পরিস্থিতি নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ: সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
0
Share.