ঢাকা অফিস: জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে বের করা ভাস্কর্যবিরোধী মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এরপর মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এখনো ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে আয়োজিত মিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টনের দিকে যাওয়ার সময় বাধা দেয় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু বলেন, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। এ বিষয়ে আমরা আগে থেকে অ্যালার্ট ছিলাম। হঠাৎ করে একদল হুজুর বায়তুল মোকাররম থেকে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিল। আমরা পল্টনে ব্যরিকেড দিয়েছিলাম। তারা সেটা ভেঙে ফেলে। এরপর আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। তবে মিছিল কারা আয়োজন করেছে তা এখনো জানা যায়নি। কোনো সংগঠনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি না থাকলেও আজ শুক্রবার দুপুরে শতাধিক লোক কোনো ব্যানার ছাড়াই বায়তুল মোকারমের উত্তর গেইটে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর চেষ্টা করে। এরপরই এই বিপত্তি ঘটে। হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠন গত কিছুদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। অবশ্য তাদের দাবি, তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নন, সব ধরনের ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে। বায়তুল মোকাররমের সামনে যারা মিছিলের চেষ্টা করছিলেন পুলিশ সদস্যরা প্রথমে তাদের বিক্ষোভ ছেড়ে সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে ভাস্কর্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর তারা মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে পল্টনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেঠা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে কিছুসময় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। তবে কিছুক্ষণ পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা কয়েকজনকে আটকে তল্লাশি চালায় এবং তাদের মোবাইল ফোন ঘেটে দেখেন। গত কয়েক শুক্রবার ধরেই বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এ ধরনের মিছিল সমাবেশ করে আসছিল বলে আজও দুপুরের আগেই বায়তুল মোকারম, পল্টন, বিজয়নগর পানির ট্যাংক, নয়াপল্টন ও বিজয়নগরের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয় শাহবাগ এলাকাতেও। সেখানেও বেলা ১২টা থেকে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। কাউকে সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা তল্লাশিও করেন পুলিশ সদস্যরা। উল্লেখ্য, রাজধানীর ধোলাইপাড় মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক ইসলামিক সংগঠনগুলোর ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান তীব্র হয়। ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে তা বন্ধের দাবি জানায় এদেশীয় ধর্মভিত্তিক কিছু রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করা না হলে তা ভেঙে ফেলারও হুমকি দেয় কট্টরপন্থি ইসলামি দলগুলো। গত ১৩ নভেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে এক সমাবেশ থেকে ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে তা অপসারণের দাবি তুলে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বক্তারা বলেন, মূর্তির বদলে আল্লাহ, কোরআন ও হাদিসের বাণী সম্বলিত মিনার স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশ মসজিদের দেশ, আউলিয়ার দেশ, মাদরাসার দেশ। এদেশে কোনও মূর্তি থাকতে দেয়া হবে না। একই দিনে, গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ‘শানে রিসালাত’ কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন। ভাস্কর্যকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় তার বিরোধিতায় নেমেছে ইসলামী দলগুলো। হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের অব্যাহত দাবির মুখে ২০১৭ সালের ২৬ মে মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে সরানো হয়েছিল ভাস্কর মৃণাল হকের শিল্পকর্ম জাস্টিস লেডির ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যবিরোধী মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ
0
Share.