ডেস্ক রিপোর্ট: ভিটামিন-ডি করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আয়ারল্যান্ডের দুটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। ওই দুটি প্রতিষ্ঠান হলো টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি ডাবলিন এবং ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন। এখনকার গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিনিদ বয়স্ক একজন আইরিশ নাগরিককে ২০ থেকে ৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন গ্রহণ করতে। এর মধ্যে একটি গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে আইরিশ মেডিকেল জার্নালে। এতে আহ্বান জানানো হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী, নার্সিং হোমে অবস্থানরত মানুষ এবং বয়ষ্ক মানুষদের অবিলম্বে ভিটামিন ডি সরবরাহ দিতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আইরিস এক্সামিনার। এতে বলা হয়েছে, সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় রত কর্মীসহ বয়স্ক মানুষদের মধ্যে ভিটামিন ডি সরবরাহ করা হলে তাতে সংক্রমণের হার সীমিত হয়ে আসবে এবং এর মধ্য দিয়ে করোনা আক্রান্তদের গ্রাফের যে উর্ধ্বগতি তা নামিয়ে আনা যেতে পারে। তারা আয়ারল্যান্ডের বয়স্ক মানুষদের প্রতিজনকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
আয়ারল্যান্ডের মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে তা বয়ষ্ক মানুষের ক্ষেত্রে বেশি। এর ফলে শ্বাসতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকরা আরো বলেছেন, যেহেতু এ ভাইরাসের টীকা এখনও আবিষ্কার হয় নি, কার্যকর কোনো ওষুধও আবিষ্কার হয় নি, তাই ভিটামিন ডি সরবরাহ দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
টিসিডিতে আইরিশ লঙ্গিটিউডিনাল স্টাডি অন এইজিং-এ (টিআইএলডিএ) প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে জোর দিয়ে ভিটামিন ডি-এর গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বয়ষ্ক মানুষরা বেশির ভাগ সময়ই বাসার ভিতর অবস্থান করেন অথবা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঘর থেকে বের হওয়ার সামর্থ থাকে না। তাই তাদের ভিটামিট ডি ঘাটতি দেখা দেয়। এ জন্য তাদেরকে ভিটামিন ডি সরবরাহ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ডি। এতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমে আসে। আর ভিটামিন ডি সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বাড়িয়ে তোলে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, আয়ারল্যান্ডে ৫০ বছরের নিচে বয়স এমন প্রতি আট জনে একজন ভিটামিনন ডি-এর অভাবে ভুগছেন। প্রতিদিন মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোদে থাকলে শরীরের ত্বক রোদ থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করে। আয়ারল্যান্ডে মার্চের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক পর্যন্ত শুধু পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায়। তাই এ সময়ের মধ্যে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে শরীর। যেসব মানুষ খুব কম রোদে বের হন অথবা নিরাপদ খাবার খুব কম পরিমাণে খান তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি। এমন মানুষ বেশির ভাগই বাড়িতে নিজেরা নিজেদের বন্দির মতো করে রাখেন। টিআইএলডিএ’র গবেষকরা সুপারিশ করেছেন যে, ৫০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের শুধু সম্পূরক হিসেবে ভিটামিন ডি শুধু শীতকালে নিলেই হবে না, পুরো বছর তাদেরকে এটা ব্যবহার করা উচিত, অবশ্য যদি তারা রোদে বের না হন।টিআইএলডিএর প্রধান গবেষক প্রফেসর রোজ অ্যান কেনি বলেছেন, বয়স্ক মানুষ সহ নানা বয়সের মানুষের বুকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভিটামিন ডি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখে বলে তাদের হাতে দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, একটি গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি সেবন করলে বুকের সংক্রমণের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। তার ভাষায়, যদিও করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ সংক্রমণে ভিটামিন ডি-এর ভূমিকা কি সে বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু জানি না, তবে ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করে, হাড় ও মাংসপেশীর স্বাস্থ্যকে মজবুত করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এটা খুব বেশি কার্যকর হয় ওই সব মানুষের ক্ষেত্রে যারা ঘরের ভিতর রয়েছেন, নড়াচড়া করতে পারছেন না, তাদের ক্ষেত্রে। প্রফেসর কেনি বলেন, ঘরের ভিতর দলা বেঁধে পড়ে থাকলে শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডও লোপ পায়। এ অবস্থায় মাংসপেশী দুর্বল হতে থাকে দ্রুত এবং এই সঙ্কটের সময়ে ভিটামিন ডি মাংসপেশীকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে। প্রফেসর কেনি আরো বলেন, ভিটামিন ডি আপনার মেজাজকে ফুরফুরে রাখতে সহায়তা করে এ বিষয়েও ভাল তথ্যপ্রমাণ আছে। যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমাণ কম হয়, তাহলে আপনার মেজাজও ভাল থাকার কথা নয়। ওই গবেষণাপত্রের সহলেখক ইমন লাইয়ার্ড বলেছেন, ভিটামিট ডি ক্যাপসুল এক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়। কারণ, তৈলাক্ত মাছ, ডি, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ সিরিয়াল অথবা ডেইরি পণ্য থেকে প্রতিদিন ৪০০ আইইউ (১০ মাইক্রোগ্রাম) ভিটামিন ডি আসতে পারে।
ভিটামিন ডি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে
0
Share.