লাদাখে আসন্ন শীতেও সেনা মোতায়েন রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। এদিকে চীনের সরকারি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভারতীয় সেনার আগ্রাসী মনোভাব দেখে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লাদাখে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন। চীন সরকারের মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনার আগ্রাসী মনোভাব দেখে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লাদাখে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন। ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, গত দু’দিনে চীনের দিকে সাঁজোয়া গাড়ির আনাগোনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেনা সরিয়ে লাদাখে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা, কামান, প্যারাট্রুপ্যার ও ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন। বসানো হয়েছে এইচজে-১০ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল সিস্টেম। লাদাখের কঠিন পরিবেশে যুদ্ধের জন্য একাধিকবার মহড়া দিয়েছে সে দেশের বিমানবাহিনী, সেনা ও প্যারাট্রুপ্যারেরা। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) একাধিক এইচ-৬ বম্বার ও ওয়াই-২০ মালবাহী বিমানকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাদাখে উড়িয়ে আনা হয়েছে। ভারতের মতে, লাদাখে অন্তত এই মুহূর্তে চীনের ৫০ হাজার সেনা রয়েছে। যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৫০টি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ভূমি থেকে আকাশ ব্যালিস্টিক মিসাইল বসিয়েছে চীন।ভারতীয় উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে প্যাংগং হ্রদের উত্তরে রীতিমত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকাঠামোগত কাজ করে যাচ্ছে চীন। প্যাংগং হ্রদের গাঁ ঘেঁষে যে আটটি গিরিশিখর (ফিঙ্গার) রয়েছে, তার পাঁচ নম্বর ফিঙ্গারে ওই তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে জুন মাসে আলোচনার পরে ফিঙ্গার ফোর থেকে চীনা সেনা সরে যাওয়ার পরে সেখানে আর নতুন করে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে দেখা যায়নি চীনকে। কিন্তু সেনাবাহিনীর একটি সূত্র মনে করছে, ফিঙ্গার চার থেকে আট যে বিতর্কিত এলাকায় এত দিন ভারতীয় সেনারাও টহল দিতে সক্ষম ছিল, সেখানে নিজেদের ঘাঁটি যথেষ্ট মজবুত করে ফেলেছে চীন। ফলে ওই এলাকা থেকে ভারতীয় গতিবিধির উপর সম্পূর্ণভাবে নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে। প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তেও ঠিক এভাবেই অবস্থান মজবুত করার কৌশল নিতে গিয়েছিল চীন। কিন্তু সেই মনোভাব আঁচ করে আগেভাগেই ২৯ আগস্ট চীনা সেনাদের হটিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়চূড়াগুলোর দখল নেয় ভারত। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেনা সূত্রে বলা হয়েছে, ২৭ আগস্ট সকালে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে আলোচনা করে রাতে হামলা চালানো হয়। একের পর এক ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে চীনারা। তাই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চীন যদি সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে পাহাড়ের চূড়া দখল হবে না এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে, শুধু তবেই সেনা কমানোর কথা ভাবা হবে। তাই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন গত কাল লাদাখের শীতের কথা বলে উত্তাপ কমানোর চেষ্টা করলেও, প্রয়োজনে শীতেও সেখানে সেনা মোতায়েন করার কথা ভাবছে ভারত।এক সেনাকর্তার কথায়, ‘শীতে চুসুলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০-৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে। গোটা এলাকা বরফের তলায় চলে যায়। এত দিন শীতে ওই এলাকায় কোনও পাহাড়া না-থাকলেও, এবার চিনের মনোভাব দেখে সিয়াচেনের ধাঁচে সারা বছর লাদাখে সেনা মোতায়েন করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।’ সূত্রের মতে, ওই প্রচণ্ড শীতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গরম কাপড়, তাঁবু ইত্যাদি কেনার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণও চলছে সেনাদের।
মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও সেনা মোতায়নের প্রস্তুতি লাদাখে
0
Share.