মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দিতে আবেদন

0

ঢাকা অফিস: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলাসহ অপমানজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ও কার্যকলাপের দায়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও জুনায়েদ বাবুনগরী গংদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। আজ রোববার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ৩ টার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জিশান মাহমুদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এই আবেদন জানান। আইনজীবী ইশান মাহমুদ বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৯৬ ধারার বিধান মোতাবেক রোষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আমলে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। এজন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে বলেছেন, কোনও ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য গত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়ে আসছে। তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের রেশ ধরে তাদের অনুসারীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান স্বীকৃত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন ভাস্কর্য গত ৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে ভাস্কর্যের ডান হাত ও পুরো মুখমণ্ডলের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলেছে। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান স্বীকৃত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হানা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সামিল। মাওলানা মামুনুল হক ও জুনায়েদ বাবুনগরীদের প্রত্যক্ষ মদদে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে আঘাত হেনেছে দুর্বৃত্তরা। যা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অপমানজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং তাদের এইরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং কার্যকলাপ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিরাগ ও ঘৃণা সৃষ্টির অশুভ অভিপ্রায়ে করা হয়েছে। বিধায় মাওলানা মামুনুল হক গং’রা দণ্ডবিধির ১২৩, ১২৪ক এবং ৫০৫ ধারার আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তথা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও আদর্শে উজ্জীবিত দেশ প্রেমিক বাঙালি হিসেবে মাওলানা মামুনুল হক গংদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত ধারায় মামলা করতে আগ্রহী। তাই উক্ত আবেদনে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৯৬ ধারা বিধান মোতাবেক রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ আমলে নেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে সরকার কর্তৃক অনুমোদনের প্রয়োজন থাকায় মাওলানা মামুনুল হক গংদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার জন্য আইনজীবী মো. জিশান মাহমুদের অনুকূলে অনুমোদন প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হেফাজতে ইসলামের নেতাদের নাম উল্লেখ না করে আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করতে দেয়া হবে না বলে হেফাজতের নেতারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। আমি ও আমরা যারা শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছি, আমরা এইটুকু বলতে পারি- কোনো ধরনের অরাজকতা বাংলাদেশে করতে দেব না। অরাজকতা বলেন, ভাঙচুর বলেন, কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। মন্ত্রী আরো বলেন, যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল। তারা মিথ্যা ও বিভ্রান্তি করার জন্য…। আমি গতকাল ফেসবুকে দেখেছি একটা ছোট ছেলে বলছে যে, মুক্তিযুদ্ধে কত শহীদ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি রক্ত হেফাজতের তারা দিয়েছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে বিভ্রান্তি অল্পবয়সের ছেলের মাথার মধ্যে দিচ্ছে এটা তারা জেনেশুনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিচ্ছে। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা ইবনে মাসউদ মাদরাসা থেকে বেরিয়ে এসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। একজনের নাম আবু বকর আর আরেকজনের নাম নাহিদ। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আরও ২ জনকে আটক করা হয়েছে।

Share.