ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারীদের লাশ হস্তান্তরের জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করছে সেনাবাহিনী। প্রিয়জনের লাশ পেতে মোটা অঙ্কের অর্থ গুনতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। সোমবার দেশটির অধিকারকর্মীদের বরাতে এ খবর জানায় সিএনএন।দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী ইয়াঙ্গুনের কাছের বাগো শহরে শুক্রবার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর রক্তক্ষয়ী হামলা চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এ হামলায় অন্তত ৮২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন।এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বলেছে, নিজ দেশের জনগণের ওপর মিয়ানমারের জান্তার রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছে চীন ও রাশিয়া। এ দুটি দেশের বাধার কারণে জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাচ্ছে না।রোববার এক ব্লগ পোস্টে এ মন্তব্য করেন ইইউর বিদেশ নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভে নিহতদের লাশ সেনাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনতে গুনতে হবে ৮৫ ডলার।বাগো ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এক ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করে, শুক্রবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে মিয়ানমারের জান্তা।লাশের জন্য এক লাখ ২০ হাজার মিয়ানমার কিয়াট আদায় করছে তারা। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় সাত হাজার ২০০ টাকার সমান। প্রায় একই কথা বলা হয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়ার প্রতিবেদনেও। তবে সিএনএন স্বাধীনভাবে এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরটিতে বসবাসকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর শুক্রবারের রক্তক্ষয়ী অভিযানের পর শহর থেকে অনেক অধিবাসী পালিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন।নিরাপত্তা বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা ও তল্লাশি চালাচ্ছে। শুক্রবার থেকে শহরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, তিনি শহরের প্রধান সড়কের কাছেই বাস করেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই আসে। তারা ঘাঁটি গড়ে। শুক্রবারের হত্যাযজ্ঞের পর মর্গে লাশের স্তূপ জমে ওঠে।এএপিপির রিপোর্ট মতে, শুক্রবার বাগোতে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী অ্যাসল্ট রাইফেল, রকেটচালিত গ্রেনেড ও হাত গ্রেনেড ব্যবহার করে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করে, শুক্রবার বাগোয় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হয়েছিল।রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্রে সেনাবাহিনী দাবি করে, বাগোর সড়কে থাকা নানা প্রতিবন্ধকতা সরানোর কাজ করছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা করে দাঙ্গাকারীরা। দাঙ্গাকারীরা হাতে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেডসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে।এদিকে মিয়ানমারে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস দেশটিতে সহিংসতা বন্ধের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। রোববার অফিশিয়াল টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে দূতাবাস বলেছে, বাগোসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে অর্থহীন প্রাণহানির ঘটনায় তারা শোকাহত।দেশটির বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনী যে সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে, সে বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় টুইটে। টুইটে বলা হয়, সংকট সমাধানের সক্ষমতা সেনা শাসকদের রয়েছে। সহিংসতা ও হামলা বন্ধ করে তার সূত্রপাত করা দরকার।মিয়ানমারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন চলছে। এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে ৭০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।এ ছাড়া সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভের জেরে তিন হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে। মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী।সু চির বিরুদ্ধে আরেক মামলা : মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছে জান্তা সরকার। সোমবার তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। এবার তার বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের অধীনে করোনা বিধিনিষেধ ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।এর মধ্যদিয়ে ফেব্রুয়াতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা দেওয়া হলো। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, করোনার মধ্যে গত বছরের আগস্ট মাসে রাজধানী নেপিদোর জাবুথিরি শহরে নিজ দল এনএলডির অফিস পরিদর্শন করেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি করোনার বিধি ভঙ্গ করেছেন। দ্য ইরাবতী।

(FILES) In this file photo taken on March 12, 2021, protesters hold up the three-finger salute and placards with the image of detained civilian leader Aung San Suu Kyi while using their mobile torches during a demonstration against the military coup in Yangon. - Myanmar's ousted civilian leader Aung San Suu Kyi was hit with a fresh criminal charge on April 12, 2021, as the junta's tough crackdown on dissent rolls on. (Photo by STR / AFP)
মিয়ানমার সেনাদের ‘লাশ ব্যবসা’ রমরমা
0
Share.