ঢাকা অফিস: বিগত দিনে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে ভাসানচর সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা পেয়ে মুগ্ধ হয়েছে কক্সবাজারে থাকা অনেক রোহিঙ্গা। এখন নিজেদের ইচ্ছায় অনেকে আসতে চায় ভাসানচর। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে আসতে ইচ্ছুক এমন রোহিঙ্গাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে চতুর্থ ধাপে মঙ্গলবার এলেন আরও এক হাজার ১১ জন রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের বোটক্লাব থেকে ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌ-বাহিনীর তিনটি জাহাজ দুপুর আড়াইটার সময় পৌঁছায় হাতিয়ার ভাসানচরে। এই যাত্রায় এলেন ২৮৮ জন নারী, ২৩৭ জন পুরুষ ও ৪৮৬ জন শিশুসহ ১ হাজার ১১ জন রোহিঙ্গা। এটা রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে ভাসানচর আসার চতুর্থ ধাপের দ্বিতীয় অংশ। এর আগে চতুর্থ ধাপের প্রথম অংশে গতকাল সোমবার ২ হাজার ১০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে।ভাসানচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহে আলম জানান, নিয়মানুযায়ী মঙ্গলবার আসা রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওয়্যার হাউজে। সেখানে তাদের ভাসানচরে বসবাসের বিভিন্ন নিয়মকানুন সম্পর্কে ধারণা দেন নৌ-বাহিনীর সদস্যরা।বরাবরের মতো মঙ্গলবারও ভাসানচর অভিমুখী রোহিঙ্গাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। কারণ আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় গড়ে ওঠা পরিকল্পিত এই অস্থায়ী আবাসনের বিষয়ে বিস্তারিত জেনেই তারা ছেড়েছে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প। ভাসানচরে পৌঁছানোর পরে তাদের গ্রহণ করে নেয়া হয় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে।মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বোটক্লাব থেকে যারা যাত্রা করে তাদের কক্সবাজার থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছিল সোমবার। রাতে তারা অবস্থান করে বিএএফ শাহীন স্কুল এ্যান্ড কলেজে। আগের দিন দুপুর ও রাতে খাবারের ব্যবস্থা করা হয় রোহিঙ্গাদের জন্য। সকালের নাস্তা শেষে তারা ওঠে তাদের জন্য নির্ধারিত তিনটি জাহাজে। তবে এই যাত্রায় ঘন-কুয়াশা থাকায় ভাসানচরে উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজ গুলোকে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। দুপুরে জাহাজেই তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়।ভাসানচরে প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় সেখানে পৌঁছায় আরও এক হাজার ৮০৪ জন। তৃতীয় দফায় ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দুই ধাপে স্থানান্তরিত হয় তিন হাজার ২৪৩ জন। সাগর-পথে অন্য দেশে পাড়ি দিতে ব্যর্থ হওয়া বোটে ভাসমান ৩০৬ রোহিঙ্গার আশ্রয় মিলেছিল আগেই। সবশেষে গতকাল সোমবার চতুর্থ ধাপের প্রথম অংশে এলেন ২ হাজার ১০ জন রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাসানচরে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ হাজার ১৬ জন।কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা বলেন, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক এরকম রোহিঙ্গাদের শুধু ভাসানচরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। তবে গত কিছু দিন থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিকট ভাসানচরের উন্নত পরিবেশের কথা শুনে এখন অনেকে রোহিঙ্গা যেতে ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন।হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে। যাতে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মুগ্ধ হয়ে ভাসানচরে এলেন আরও ১০১১ জন রোহিঙ্গা
0
Share.