মুরাদের বিরুদ্ধে স্ত্রীর জিডি তদন্তে ধীরে চলো নীতি

0

ঢাকা অফিস: নারীদের নিয়ে কটূক্তির জেরে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান পরে তার পরিবারের সদস্যদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানদের মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে তার যে যে জিডি করেছিলেন, তার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। গত মাসের মাঝামাঝি তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। তবে তদন্তে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্তও জোগাড় করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, জিডির পর বাদিকে ডা. মুরাদ হাসান নতুন করে কোনো হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, এমন কোনো অভিযোগ থানায় আর আসেনি। হুমকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিডির এক দিন পর (৮ জানুয়ারি) মুরাদ হাসানের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র এবং তার স্ত্রীর লাইসেন্স করা একটি অস্ত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে জমা নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এর মধ্যে একটি পিস্তল ও দুটি শর্টগান। ডা. মুরাদ হাসান যখন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সব সময় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। নারীদের নিয়ে কটূক্তি ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতিন লন্ডনপ্রবাসী জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের পর তার একটা অডিও ফাঁস হয়। তাতে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির উদ্দেশে কুৎসিত বাক্য ব্যবহার এবং তাকে ধর্ষণের হুমকি দিতে শোনা যায়। এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রী ও দলীয় সব পদ হারান তিনি। এরপর থেকে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। মাঝে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানের থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা নিয়ে আরেক দফা তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। পুলিশ সূত্র যা বলছে ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা গেছে, জিডির তদন্ত চলছে। তবে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার মতো তেমন অগ্রগতি নেই। মুরাদের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী অভিযোগ দিলেও বর্তমানে তারা পরস্পর কথাবার্তা বলছেন। এজন্য থানা পুলিশও কিছুটা সময় নিচ্ছে। এ দম্পতি (মুরাদ-জাহানারা) যদি নিজেরা বসে ঠিকঠাক করে ফেলেন, তাহলে প্রতিবেদন সেভাবেই দেওয়া হবে। জিডির পর মুরাদের বক্তব্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, এখনো তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি যোগাযোগ না করলেও পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দিবে। বিবাদী (ডা. মুরাদ হাসান) ঘটনার দিন কী ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন এ বিষয়ে বাদির স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। মুরাদ হাসান এখন আড়াল থেকে বের হচ্ছেন, নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন, কিন্তু তার সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানায় পুলিশ। ধানমন্ডির বাসায় তিনি আসছেন না জানিয়ে পুলিশ বলছে, ‘তিনি কোথায় থাকছেন তাও আমরা জানি না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি মাঝেমধ্যে উত্তরায় ভাইয়ের বাসায় থাকছেন। মুরাদ হাসানকে পিএর মাধ্যমে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে জিডির বিষয়ে তিনি কোনো মতামত দেবেন কি না। যুক্তি থাকলে তিনি যেন তা উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে এখনো কোনো উত্তর আসেনি। তবে তিনি চাইলে মতামত দিতে পারেন, না চাইলে নাও দিতে পারেন।’ গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় জরুরি সহায়তা নম্বর ৯৯৯-এ মুরাদ হাসানের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান ফোন করে পুলিশি সহায়তা চান। এরপরই ধানমন্ডি থানার ১০ সদস্যের একটি দল ধানমন্ডিতে মুরাদের বাড়িতে ছুটে যায়। পুলিশ যাওয়ার আগে ডা. মুরাদ বাসা থেকে চলে যান। এদিন সন্ধ্যায় স্বামীর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন জাহানারা এহসান। জিডি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করলে ৯ জানুয়ারি থানার উপপরিদর্শক রাজীব হাসানকে তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়। এদিকে জিডির একদিন পর (৮ জানুয়ারি) হুমকির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরাদ হাসানের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র এবং তার স্ত্রীর লাইসেন্স করা একটি অস্ত্র নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজেদের জিম্মায় নেয় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। এগুলো এখন থানায় জমা আছে। এর মধ্যে একটি পিস্তল ও দুটি শর্টগান। বৃহস্পতিবার বিকালে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিডির তদন্ত চলছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’ জব্দ করা অস্ত্রগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেগুলো পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। বাদির নিরাপত্তার জন্যই পুলিশ অস্ত্রগুলো জিম্মায় নিয়েছিল। সমস্যা সমাধানের পর সেগুলো ওনারা ফেরত নিতে পারবেন।’ যত বিতর্কে মুরাদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে ফোনে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৭ ডিসেম্বর তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপর তাকে জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। তর্কের মুখে মুরাদ গত ১০ ডিসেম্বর কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। তবে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি তাকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। এরপর কানাডা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাততে যান মুরাদ। সেখানেও প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসেন সমালোচিত এই সংসদ সদস্য।এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসেন বিতর্কিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী। মাস খানেক আগে তাকে প্রথম দেখা যায় জামালপুরে তার চাচার জানাজায়। এরপর সেখানে একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে। সম্প্রতি জামালপুরে স্থানীয় একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকার দেন ডা. মুরাদ। ‘পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে’ তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন বলে জানান তিনি। এ সময় আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমার আসনের সাধারণ মানুষ আমাকে চাইবে এর নিশ্চয়ই কোনো যৌক্তিক কারণ আছে। আমার যদি সেই যোগ্যতা থেকে থাকে, আমাকে যদি তারা যোগ্য মনে করে, ভালোবাসে, আমাকে যদি তারা বিশ্বাস করে এবং আল্লাহতায়ালা যদি আমার তাকদিরে লিখে থাকেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মা, উনি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন নিশ্চয়ই আমি নির্বাচন করব।’

 

Share.