ঢাকা অফিস: সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু দুর্নীতি করে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্নীতির টাকা কানাডায় বেগমপাড়ায় পাচার হচ্ছে। সিলেট জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল একথা বলেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ছয় বছর পর হওয়া সিলেট জেলা বিএনপির এ সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসীনা রুশদীর লুনা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের তারা এখন রাজনীতি ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত। কদিন আগেও পুলিশের আইজি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন আর ডিএমপি কমিশনার বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শিষ্টাচার বহির্ভূত।’ আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে পুলিশের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে দুর্নীতি হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বলে দেশে মেগা উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু আদতে মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু দুর্নীতি করে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্নীতির টাকা কানাডায় পাচার করা হচ্ছে।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগও আজ স্বাধীন নয়। বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। ডিসি-এসপি আর আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে চায় সেভাবে বিচার হয়। তাদের নির্দেশে জামিন হয়।’ ‘বাহাত্তরের সংবিধানকে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে ছিন্নভিন্ন করে। তারা নিজেদের প্রয়োজনে বাহাত্তরের সংবিধান সংযোজন-বিয়োজন করেছে। এরপর একদলীয় বাকশাল সৃষ্টি করে।’ স্বাধীনতার সঙ্গে নির্ভয়ে কথা বলতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যেখানে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারবো। কিন্তু স্বাধীনতার পরই আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ ‘আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ এসেছিলো। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি এনে দিয়েছিলেন। এই সরকার এসে আবার সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে।’ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী সদস্য মো. রেজাউল করিম বাদশা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামিম, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী। সম্মেলনের পর কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই তিন পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন প্রার্থী। মোট ১ হাজার ৮১৮ জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করছেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে আবুল কাহের চৌধুরী শামীম সভাপতি ও আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। তিন মাসের এই কমিটি প্রায় আড়াই বছর পার করে দিয়েছে।