মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল চেয়ে করা রিট খারিজ

0

ঢাকা অফিস:  ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে নতুন মেধা তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পরীক্ষার ত্রুটি নিয়ে কোনও মেডিকেল পরীক্ষার্থী আবেদন করলে তা সাতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।২০২০-২১ সেশনে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ভুল দাবি করে নতুন মেধা তালিকা প্রণয়ন করে মেডিকেল শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য গত ১১ মে ২৪৮ জন পরীক্ষার্থীর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ও মোহাম্মদ কাওছার ই–মেইল ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ নোটিশ পাঠান।নোটিশে প্রকাশিত মেধা তালিকার ভিত্তিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে এবং ত্রুটিপূর্ণ মেধা তালিকা বাতিল করে তিন দিনের মধ্যে পুনর্নিরীক্ষার মাধ্যমে নতুন মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে অনুরোধ করা হয়।রিটে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা ফলাফলে অসংখ্য ভুল এবং বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক গত ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রচারিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী একজন পরীক্ষার্থী কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তবে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৭.৫ নম্বর কর্তন করা হবে। আবার কোনো পরীক্ষার্থী যদি গতবছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে তার ৫ নম্বর কাটা যাবে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায়, অনেক পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রেই এই নিয়মটি পালন করা হয়নি। যেসব পরীক্ষার্থীদের ৭.৫ নম্বর কর্তন করার কথা সেখানে মাত্র ৫ নম্বর কর্তন করা হয়েছে। ফলে ওইসব ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ২.৫ নম্বর বেশি দিয়ে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আবার প্রথমবার পরীক্ষায় যেখানে কোনো নম্বর কাটার কথা নয়, সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেই ৫ নম্বর কেটে মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী অন্তত দুটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল দুটি করে। সেই সঙ্গে অন্তত তিনটি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর ছিল না। সংরক্ষিত জেলা ও উপজাতি কোটার আসন পূরণেও ব্যাপক অসঙ্গতি করা হয়েছে। ঢাকা জেলা কোটা আবেদনকারী পরীক্ষার্থীকে দেখানো হয়েছে মেহেরপুর জেলার পরীক্ষার্থী হিসেবে। উপজাতি কোটায় সংরক্ষিত আসনে অসংখ্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব ত্রুটি ও অসঙ্গতি রেখে মেধা তালিকা প্রণয়ন করার ফলে হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী পরীক্ষার্থী মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে পড়েছে। এসব কারণে প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করে এবং এসব ত্রুটি ও অসঙ্গতি সংশোধন করে নতুন মেধা তালিকা প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বরং ত্রুটিপূর্ণ মেধাতালিকায় ভিত্তিতেই মেডিকেল কলেজগুলোতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে আগামী ২২ মে থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।রিটে বলা হয়, যে ত্রুটিপূর্ণ মেধা তালিকার ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অর্থই হলো প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করা, তাদের আজীবন লালিত আকাঙ্ক্ষা চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা। সেইসঙ্গে দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া, যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২ ও ৪০ এর পরিপন্থী।গেল ৪ এপ্রিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। জাতীয় মেধার ভিত্তিতে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ৪ হাজার ৩৫০ জন ভর্তি-ইচ্ছুক নির্বাচিত করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন উত্তীর্ণ হন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩৯.৮৬ শতাংশ।

Share.