ঢাকা অফিস: ক্লাস-পরীক্ষায় নিয়মিত অংশ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ওঠেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানা জাহান। তার ধারণা ছিল, হলে উঠলে খরচ কমে যাবে। কিন্তু হলে ওঠার পর মাস পার না হতেই ধারণা পাল্টে যায়। কারণ, মেসের চেয়ে হলের খাবারে প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে তাকে। খাবারের মানও খারাপ। রেজওয়ানা জাহান জনকণ্ঠকে জানান, প্রথম বর্ষে পুরান ঢাকায় সহপাঠীদের সঙ্গে মেস ভাড়া করে থাকতেন। তখন গড়ে প্রতি মাসে থাকার খরচ পড়ত ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। আর খাবারের জন্য আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। মেসের এক কক্ষে থাকতেন দুজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠে এক কক্ষে ৮ জন থাকছেন। এ জন্য এককালীন বার্ষিক ফি দিয়েছেন ৫ হাজার ২৬৫ টাকা। প্রতি মাসে সিট ভাড়া আসে ৪৩৯ টাকা। আর হলের ক্যান্টিনে খাবার খরচ প্রতিদিন দেড় ‘শ থেকে দুই ‘শ টাকা। এতে মাস শেষে শুধু খাবার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজার টাকা, যা মেসের তুলনায় দ্বিগুণ। এখানেই শেষ নয়। রেজওয়ানা জানালেন, হলের ক্যানটিনের খাবারের মান ভালো নয়। খাবারের পরিমাণও খুব কম। আজ মঙ্গলবার ছাত্রীদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সকালে ক্যানটিনের খাবারের দাম ছিল সেদ্ধ আটার রুটি ৫ টাকা, পরোটা ৫ টাকা, সবজি ৮ টাকা, বুটের ডাল ৮ টাকা, হালুয়া ১০ টাকা, ডিম–খিচুড়ি ৩০ টাকা, ভাত ৮ টাকা, ডিম অমলেট ১২ টাকা, পাতলা ডাল ২ টাকা, রং–চা ৫ টাকা, দুধ–চা ৮ টাকা, কফি ১০ টাকা। সকালের নাশতায় কেউ দুটি পরোটা, সবজি, দুধ–চা খেলে দিতে হয় ২৬ টাকা। দুপুরে মুরগি–খিচুড়ি ৫০ টাকা, ডিমপোচ ও আলু–খিচুড়ি ৪০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির মাংস ৩০ টাকা, পাবদা মাছ ৩০ টাকা, পাঙাশ মাছ ২৬ টাকা, চাপিলা মাছ ৩০ টাকা, পুঁইশাক ১০ টাকা, করলাভাজি ১০ টাকা, মাছভর্তা ১০ টাকা, ভাত ৮ টাকা, পাতলা ডাল ২ টাকা, রুই মাছ ৩০ টাকা। এই হিসাবে কেউ মাছ-মুরগির সঙ্গে শাক-ভাজি, ভাত-ডাল দিয়ে খেলে সর্বনিম্ন খরচ পড়ছে ৫০ টাকা। অন্যদের দেখাদেখি হলে থেকে কিছুটা সাশ্রয়ের জন্য নিজে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা নেন নুসরাত। তিনি বলেন, হলের ক্যানটিনে খাবারের দাম বেশি হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্রী নিজেরাই রান্না করে খেতে চান। দেখা যায়, এক রুমে আটজনের মধ্যে চারজনেরই রান্না করে খাচ্ছেন। আবার অনেকে স্বাস্থ্যগত ও বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাধ্য হয়ে ভালো খাবার খেতে নিজেই রান্না করে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে সম্প্রতি হল কর্তৃপক্ষ রান্না করার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে নিষেধ করায় পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। এর মধ্যে গত রবিবার হলে রান্না করার বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম জব্দ করেছে হল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের ডাইনিংয়ে খাবার বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শামীমা বেগম বলেন, ছাত্রীদের ডাইনিংয়ের সমস্যা দেখার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত ক্যানটিন পরিচালক ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে খাবারের মান, মেনু ও দাম নির্ধারণ করে দেবে। অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, হলের প্রতিটি ফ্লোরে প্রায় ৯৮ জন করে ছাত্রী থাকছেন। তাঁদের জন্য প্রতি ফ্লোরে দুটি করে গ্যাসের চুলা এবং দুটি করে বেসিন রয়েছে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁরা চাইলে দপ্তরে এসে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন।
মেসের চেয়ে হলের খাবারে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা
0
Share.