বাংলাদেশ থেকে বগুড়া প্রতিনিধি: মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়ে বিক্রির পর সেই টাকায় ফূর্তির জন্যই হত্যা করা হয় বগুড়ার স্কুলছাত্র নওফেল শেখকে (১৪)। লাশ উদ্ধারের ৭ দিনের মাথায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত নবির হোসেন নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর এ কথা সাংবাদিকদের জানান বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী। এর আগে গত ২০ জুন বিকালে উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা গ্রামের জঙ্গল থেকে নওফেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নওফেল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের দাড়িগাছা হাটপাড়া গ্রামের ইসরাফিলের ছেলে। সে দাড়িগাছা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিশোর নবির হোসেন ওই গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী তার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকেই আমরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং এর রহস্য উদঘাটনে জোরালোভাবে কাজ করছিলাম। প্রথমে সাতমাথা থেকে নওফেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এরপর ফোনের সূত্র ধরে আটক করা হয় নবির হোসেনের কথিত বান্ধবি জাকিয়া খাতুনকে। পরে পুলিশের একটি দল নবির হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সোমবার (২৭ জুন) গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে নবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ওই কিশোর আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, নিহত নওফেল এবং নবির দুজন বন্ধু ছিল। তারা প্রায়ই দাড়িগাছা গ্রাম থেকে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যে ধূমপান করতো। এরমধ্যে প্রায় দুই মাস আগে নওফেলের বাবা ইসরাফিল ছেলেকে জমি বিক্রির ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে দেয়। নওফেলের হাতে মোবাইল ফোন দেখে নবিরের ফোন হাতিয়ে নেয়ার লোভ হয়। এরপর সে পরিকল্পনা করে গত ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় সেদিন ওই জঙ্গলে গিয়ে জন্মদিন উপলক্ষে আনন্দ করার কথা জানায়। এতে নওফেল রাজি হয়ে যায়। পরে ১৮ জুন বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ধূমপান করার এক পর্যায়ে নবির পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া মাফলার দিয়ে নওফেলকে শ্বাসরোধ করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য পাশের জমি থেকে একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে নওফেলের মাথায় সজোরে আঘাত করে। পরে নওফেলের লাশ জঙ্গলে ফেলে তার মোবাইল ফোন নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। পুলিশ সুপার বলেন, খুনের ওইদিন দুপুরে নবির তার কথিত বান্ধবী জাকিয়া খাতুনকে ডেকে নিয়ে বগুড়া শহরের সাতমাথায় পুরাতন মোবাইল ফোন ক্রয়-বিক্রয়ের দোকানে ৫ হাজার টাকায় নওফেলের মোবাইলটি বিক্রি করে দেয়। পরে সে টাকা থেকে তারা দু’জন শহরের গালাপট্টিতে হোটেল টুইন ব্রাদার্সে ২ হাজার টাকা দিয়ে রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। এরপর নবির তার এক বন্ধুকে ওই মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ডেকে নেয়। পরে মোবাইল জাকিয়াকে আরো দেড় হাজার টাকা দিয়ে তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। পুলিশ সুপার আরও বলেন, ২০ জুন লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে খুনি ওই নবির ঢাকায় দিয়ে আত্মগোপন করে। নবিরকে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে পাঠানো হবে। এছাড়া মোবাইল বিক্রিতে সহায়তাকারী নারী জাকিয়াকেও গ্রেপ্তার দেখানোর পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোতাহার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা খাতুন এবং শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
‘মোবাইল বিক্রির টাকায় ফূর্তি করতেই হত্যা করা হয় নওফেলকে’
0
Share.