ডেস্ক রিপোর্ট: রুটিন বৈঠক হলেও পরিস্থিতির বিবেচনায় এটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। টু প্লাস টু বৈঠকে যোগ দিতে সোমবারই ভারতে পৌঁছান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। মঙ্গলবার সকালে তারা বৈঠক করেন ভারতের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভালের সঙ্গে। দুপুরে তারা বৈঠকে বসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। সেখানে একাধিক সামরিক বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে দুই দেশের। বৈঠকের পর পম্পেও বলেছেন, যেকোনো বিপদেই ভারতের সঙ্গে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। সেই বিপদ চীনের বা অন্য কোনোভাবে আসতে পারে। আমেরিকার মনোভাবের কোনও পরিবর্তন হবে না। তারা ভারতের পাশেই থাকবে। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে আমেরিকা সর্বদা ভারতের সঙ্গে আছে। এভাবেই দিল্লি সফরে এসে চীন ও পাকিস্তানকে বার্তা দিলেন পম্পেও। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লাদাখ পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। সীমান্তে সামরিক উত্তাপ মোকাবিলায় ভারতকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন পম্পেও। তিনি বলেন, চীন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তাই বৈঠকে চীনের মোকাবিলা করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারতে আসার আগেই মাইক এসপার জানিয়েছিলেন যে, এই বৈঠকে ফোকাস থাকবে চীন। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন আগ্রাসন চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে চীনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তা তৈরি করা হবে। এদিন অজিত ডোভাল এবং মার্কিন দুই মন্ত্রীর মধ্যে এ বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে সামরিক স্যাটেলাইট শেয়ারের চুক্তি করা হয়েছে। যার অর্থ, মার্কিন সামরিক স্যাটেলাইটের ছবি এবং তথ্য ভারতকে জানাবে আমেরিকা। আমেরিকার সঙ্গে যে এই বিশেষ সামরিক চুক্তি ভারতের হতে পারে, ডয়চে ভেলেকে সে কথা অনেক আগেই জানিয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র। মঙ্গলবার সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশের সঙ্গেই সামরিক স্যাটেলাইট ইমেজ শেয়ার করে আমেরিকা। এছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, অস্ত্র এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম সংক্রান্ত চুক্তিও হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তিগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে তৃতীয়বার টু প্লাস টু বৈঠকে মিলিত হলো দুই দেশ। তাই এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সরাসরি সংঘাত শুরু হয়েছে। চীন এবং পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে একট্টা হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনকে দিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়েছে। ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে চীন ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বলে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে ভারত এবং সেই কূটনীতিতে খানিকটা সফলও হয়েছে তারা। ভারতের কূটনীতি : বর্তমান সময়ে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের খারাপ সম্পর্ককে ব্যবহারের চেষ্টা করছে ভারত। এশিয়া প্যাসিফিকে চীনের অসম শক্তিবৃদ্ধি এবং তাইওয়ান এবং হংকং নিয়ে চীনের মনোভাবের নিন্দা করছে আমেরিকা এবং ইউরোপ। ভারত সেটিকেই কাজে লাগিয়েছে। দক্ষিণ চীন সমুদ্র এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে চীন বিরোধী ব্লক তৈরিতে মদত দিয়েছে ভারত। নভেম্বরের শুরুর দিকে ভারতের উপকূলে মালাবার সামরিক মহড়া হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে নৌ-মহড়ায় যোগ দেবে অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা। ফলে এই মুহূর্তে এশিয়ায় ভারতকেই শক্তিশালী বন্ধু বলে মনে করছে আমেরিকা। কিছুদিন আগে ফ্রান্সও সে কথা জানিয়েছিল।
টু প্লাস টু বৈঠক :তাই রুটিন বৈঠক হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমেরিকা যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং ভারতকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে বেইজিংয়ের ওপরেই পরোক্ষে চাপ তৈরি করা হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, এই বৈঠকের ফলে এশিয়া প্যাসিফিকে সামরিক এবং কূটনৈতিকভাবে ভারত এবং মার্কিন সমঝোতা অনেকটা বৃদ্ধি পেলো। এশিয়া প্যাসিফিকে নৌ শক্তিতে চীন অত্যন্ত শক্তিশালী। পিএলএ স্থল সেনার চেয়ে পিএলএ নেভি কয়েক গুণ শক্তিশালী। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে সে কারণেই এত আগ্রাসী হতে পারে চীন। জোট বা ব্লক তৈরি করে আমেরিকা সেখানেই চীনকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে।