ঢাকা অফিস: রোববার সকালে গার্মেন্টস কারখানায় কাজে যোগ না দিলে ‘চাকরি যাওয়ার’ হুমকি আছে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন তৈরিপোশাক শ্রমিক।শনিবার সকাল থেকেই ময়মনসিংহ থেকে শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশি বাধা মুখে পড়েন তারা।করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি সিদ্ধান্তে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি যানবাহন ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল করছে পণ্যবাহী পরিবহন।এ মাসের শুরুতে গার্মেন্টস খোলার খবরে ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক কিলোমিটারের বেশি পায়ে হেঁটে চাকরি বাঁচাতে কর্মক্ষেত্রে এসেছিলেন দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী কারখানার শ্রমিকরা।শনিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ময়মনসিংহ পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় দেখা যায় ঢাকামুখী গার্মেন্টস কর্মীদের। তবে দিনের বেলা তাদের বাড়ির দিকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।তবে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ফিরে না গিয়ে চর কালিবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে অবস্থান করতে থাকেন অনেকেই। শনিবার রাত ১১টার পর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী কয়েকজন পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা এক বার্তায় একথা বলে। গার্মেন্টস কর্মী মারুফা আক্তার বলেন, “আমাদের ফোন করে বলা হয়েছে রোববার সকাল ৭টার মধ্যে গার্মেন্টস খুলবে। সকাল ৭টার আগেই কাজে যোগদান করতে হবে।“আমরা যদি সঠিক সময়ে না যাই চাকরি চলে যাবে। তাই রাতেই বাচ্চা কোলে নিয়ে টঙ্গীর পথে রওনা দিচ্ছি।“মুক্তাগাছা থেকে ভ্যানে করে বাইপাস মোড় পর্যন্ত এসেছি, সাথে ভাইও রয়েছে। এখন পিকাপভ্যানে করে টঙ্গীর পথে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কোনো গাড়ি নাই তাই ভাড়াও দ্বিগুণ দিতে হবে।” গাজিপুরের ন্যাচারাল ডেনিমস কর্মী সুমি আক্তার বলেন, “বিকালে আমাকে ফোন করে বলছে-আগামীকাল গার্মেন্টস খোলা। তাই, নেত্রকোণা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসছি অটো দিয়ে। এখানে এসে পড়েছি পুলিশের বাধায়।“তবে, যেভাবেই হোক সকাল ৭টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হবে। না হলে চাকরি থাকবে না।”টঙ্গীর জাবেদ জোবেদ ডাইং ফ্যাক্টরির কর্মী রুহুল আমিন বলেন, “গার্মেন্টস থেকে ফোন করে বলছে আগামীকাল থেকে গার্মেন্টস খুলবে। এ খবর পেয়ে ইফতারের পর মেয়েকে নিয়ে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি অটোতে করে।“ময়মনসিংহ আসলে পুলিশ আমাদের ঢাকায় যেতে বারণ করে। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাইপাসের সামনে থেকে এক মাছের গাড়ির চালকের সাথে কথা হয়েছে। সে আমাদের টঙ্গী পর্যন্ত নিয়ে যাবে।”সেখানে নেমে মেয়েকে আশুলিয়ায় রেখে টঙ্গী যাবেন বলে জানান তিনি।“চাকরিটাই একমাত্র ভরসা সেটি না থাকলে বাল-বাচ্চা নিয়ে কী করে চলব। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি।” বাইপাস মোড়ের বাসিন্দা রুবেল হোসেন ও নাইমুর রহমান জানান, শত শত শ্রমিক দিনের বেলায় ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অনেকেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।দুইদিন পরপর শ্রমিকদের নিয়ে এমন তামাশায় তিনি হতাশ।গাজীপুরের ডিজাইন টেক্স গার্মেন্টসের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার হারুনুর রশীদ জানান, তাদের কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গার্মেন্টস খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে তাদের কারখানার জ্যাকেট শাখার শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কাছে গার্মেন্টস খোলার কোনো নির্দেশনা নেই। এ কারণে শ্রমিকদের যেতে আমরা বাধা দিচ্ছি।”রাতেও কিছু শ্রমিক সিএনজি, পিকআপে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে, নির্দেশনা পেলেই গার্মেন্টস কর্মীদের যেতে দেওয়া হবে।” চট্টগ্রামে কিছু কারখানা খোলার কথা কর্তৃপক্ষ জানালেও ঢাকার কোনো কারখানা খোলার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম ইপিজেডের জিএম খুরশিদ আলম শনিবার এক বার্তায় বলেন, “বিভিন্ন কারখানা রোববার থেকে আংশিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। শ্রমিকদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনেই কারখানা পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।” অন্যদিকে গণমাধ্যমের খবর রোববার ঢাকা বিভাগের পোশাক খাতের কারখানা সীমিত আকারে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। বিজিএমইএ-র ওয়েব সাইটে কারখানা খোলার ক্ষেত্রে কয়েকটি পরামর্শ প্রকাশ করেছে। তাতে কারখানার কাছে বসবাসকারী শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত করতে বলেছে। একই সাথে যারা গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে তাদের কাজে যোগদানে নিরুৎসাহিত করতে এবং কারখানায় ঢুকতে না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এই পরামর্শ প্রকাশ করলেও দূর দূরন্ত থেকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে ডাক পেয়েই গ্রাম থেকে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন। সামাজিক দূরত্বর তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে বিভিন্ন বিকল্প পরিবহনে গাদাগাদি করে তাদের ঢাকার পথ ধরতে দেখা গেছে।
রাতের আঁধারে ফের ঢাকার পথে পোশাক শ্রমিকরা
0
Share.