বাংলাদেশ থেকে রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচা রী ঐক্যমঞ্চ ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে অভিযোগ ওঠা শিক্ষকদের ‘দুর্নীতিবাজ’ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের চাকরি থেকে বহিষ্কার করে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের রিলিফ ভাস্কর্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ছিলো না। মূল কাজে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বাঁ পাশে এবং নিচে বঙ্গবন্ধুর রিলিফ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যম জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। যেটি কোনো প্রগতিশীল শিক্ষকদের কাজ হতে পারে না। বক্তারা আরও বলেন, স্মৃতিফলকটি নির্মাণে ১৪শ কেজি তামার ব্যবহার করার কথা ছিল। যার মূল্য ধরা হয়েছিল ১৪ লাখ টাকা। অথচ সেখানে মাত্র ৪৯২ কেজি তামা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও স্মৃতিফলকে টেম্পার্ড গ্লাস ব্যবহার করার কথা থাকলেই তা করা হয়নি। ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শামীম হোসেনের সভাপতিত্বে ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক এ এন এম ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. গোলাম সারওয়ার, ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান, চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ড. হুমায়ুন কবির, হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহবায়ক ড. রবিউল ইসলাম, রাবি শাখা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি ও এম ফিল ফেলো মতিউর মর্তুজা প্রমুখ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা- কর্মচারী অংশ নেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সাবেক ভিসি অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের আমলে রাবিতে শহীদ তিন শিক্ষকের স্মরণে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় । এটি নির্মাণে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়। ফলকটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই কমিটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নামে তৈরি হলেও এতে মূল নকশা এড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাসহ এটি নিয়ে আরও বিতর্ক শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৩ তম সিন্ডিকেট সভায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের প্রশাসন। তদন্ত শেষে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার তথ্যযুক্ত করে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। বছরজুড়ে রাবির বর্তমান ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও সাবেক ভিসি অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের অনুসারী শিক্ষকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের অনুসারী শিক্ষকদের করা বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। এরপর থেকে অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকা শিক্ষকদের বহিষ্কার দাবি জানিয়ে আসছে অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের অনুসারীরা।
রাবির বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণে দুর্নীতি, জড়িতদের শাস্তির দাবি
0
Share.