রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আগে টিকা নিলে জনগণ ভরসা পাবে : রিজভী

0

ঢাকা: উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা যেভাবে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে মানুষকে আস্থা ও ভরসা দিচ্ছেন ও আশ্বস্ত করছেন, আপনারাও সেই পথ অনুসরণ করুন। তাঁদের মতো আপনারাও সাহসী পদক্ষেপ নিন। আপনারা আগে টিকা নিলে জনগণ ভরসা পাবে। তখন দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে এই টিকা নিতে সাহস পাবে।’ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী। এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী টিকা নিলে ভ্রান্ত ধারণা কেটে যাবে। অনাগ্রহ কাটিয়ে টিকা নিয়ে আগ্রহী হবে দেশবাসী। তখন জনগণ উপলব্ধি করবে, আপনারা দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত, জনগণকে আপনারা সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন।’বাংলাদেশের মানুষের ওপর ট্রায়াল করে টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিত হওয়ার জন্যই উপহার হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে এ টিকা পাঠিয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘ভারত নিজেরা এই টিকার পরীক্ষা শুরু করবে আগামী মার্চ থেকে। ওই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ না হওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ায় বহু বিশেষজ্ঞ বিস্মিত। সুতরাং আমরা কি বিপজ্জনক গিনিপিগে পরিণত হয়েছি ভারতের টিকা পরীক্ষার?’রিজভী বলেন, ‘এই সরকার শুরু থেকেই কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের আতঙ্ক ও ভীতির সুযোগে ত্রাণ বিতরণের নামে সারা দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট, ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় কোভিড টেস্টের ভুয়া সনদপত্র কেলেঙ্কারি, করোনা চিকিৎসার নামে ভুয়া হাসপাতাল চালু, মাস্ক, পিপিই সরঞ্জাম, স্যানিটাইজার খরিদ, টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির মহোৎসব—এত সব অপকর্ম করে জনগণের কাছে এই সরকারের কোনোই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এরপর করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভারত থেকে টিকা আমদানি ও ক্রয় নিয়ে নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম এক উপদেষ্টার মালিকানাধীন বেক্সিমকোর অতিমাত্রায় তৎপরতা, চুক্তি, বেক্সিমকোর তৎপরতার সঙ্গে সরকারের রহস্যজনক আর্থিক লেনদেনের যোগসাজশ—সব মিলিয়ে টিকা সম্পর্কেও জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে।’বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, “উপহারের নামে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার পরও মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির আরেকটি কারণ হচ্ছে, টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভারত সরকার যে দামে ‘কোভিশিল্ড’ কিনছে, তার চেয়ে এক ডলার বেশি দামে তারা বিক্রি করছে বাংলাদেশের কাছে। কেনার সময় প্রতিটি টিকায় বাংলাদেশকে এক ডলার করে বেশি দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়ার পর প্রথমে বাংলাদেশ চায় অগ্রিম নগদ টাকায় কেনা টিকার সরবরাহ। সেটি সরবরাহ না করে তড়িঘড়ি করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিনা পয়সায় ২০ লাখ ডোজ দিয়ে কী বোঝাতে চাইছে ভারত? ধরা যাক, তিন হাজার টাকা মূল্যের জিনিস পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করার পর দোকানি ১০০ টাকা উপহার দিল, সেটাকে আমরা কী বলব? উপহাস ছাড়া কি আর কিছু বলা যাবে? কিংবা শাড়ির দোকানে কোল্ড ড্রিংকস আপ্যায়নের মতো ঘটনা।”রিজভী বলেন, “গত ৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি টিকার জন্য বেক্সিমকোর চুক্তি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই ৫০ লাখ ডোজ ‘কোভিশিল্ড’ টিকা পাবে বাংলাদেশ। টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬০০ কোটি টাকা সিরামের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর পরই জানা যায়, সিরাম ইনস্টিটিউটের ওপর টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। এখন হঠাৎ করেই আবার জনগণ শুনতে পাচ্ছে, ২৫ কিংবা ২৬ জানুয়ারি নাকি বাংলাদেশের কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ আসবে। ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি’ চলার হেতু কী? উপহারের আগে বেশি দামে বাংলাদেশের কেনা টিকা সরবরাহে কী ক্ষতি ছিল? এখানেই তো মনে হয় শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণের টাকা অকাতরে পাচার হওয়া।”রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, “করোনা ট্রেস-টেস্ট-ট্রিটমেন্ট নিয়ে কেলেঙ্কারির পর এবার টিকা গ্রহণের ব্যাপারেও মানুষের মনে সংশয় রয়েছে। অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। সরকার আগে জনগণকে টিকা দিতে চায়। এতে গণমানুষের মনে সন্দেহ ঢুকেছে। বাংলাদেশের প্রচলিত রেওয়াজ হচ্ছে, যখন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও সেবা দেওয়া হয়, শুরুতেই তা ক্ষমতাসীন ও সরকার সমর্থক প্রভাবশালী লোকজন ভোগ করে থাকেন। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, এমপি, নেতা, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ও ব্যবসায়ী শ্রেণির উচ্চ পর্যায়ের লোকজন সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও সেবা সর্বপ্রথম ভোগ করে থাকেন। প্রয়োজনে অন্যায় করে, জোর করে এমনকি লুট করে হলেও। কিন্তু করোনার টিকার বেলায় ভিন্ন ব্যবস্থার কথা সরকারি দলের মন্ত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছে। তারা যখন বলেন, ‘করোনার টিকা সরকারি মন্ত্রী, এমপিরা আগে পাবেন, এমন ব্যবস্থা করা হয়নি’—তখন দেশের মানুষ কনফিউজড হয়ে পড়ে। সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণেই মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কোনো কোনো মন্ত্রী যখন বলেন, ‘বিএনপি চাইলে করোনার টিকা তাদের সবার আগে দেওয়া হবে’, তখন এই টিকার ভেতর মানুষ গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। টিকা প্রসঙ্গে সরকারি মন্ত্রীদের বক্তব্য ‘সতীনের ছেলেকে বাঘ মারতে পাঠানো’র মতো।

Share.