স্পোর্টস ডেস্ক: ১৪২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। তাড়া করতে নেমে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খেয়ে বসে নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে লড়াই জমিয়ে তোলেন তিনি। শেষ ওভারে জয়ের আশাও জাগিয়ে তোলেন তিনি। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। অতিথি অধিনায়কের প্রতিরোধ ছাপিয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।এই জয়ের সুবাদে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর এক ম্যাচ জিতলেই নিউইজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়বে বাংলাদেশ। সিরিজের পরের ম্যাচ আগামী রোববার।মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪১ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেছেন ওপেনার নাঈম শেখ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেষ সাত টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান এটি। তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১৩৭ রানে থামে নিউজিল্যান্ড।জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনারে ভালো শুরুর আভাস দেয় নিউজিল্যান্ড। তবে কিউইদের ওপেনিং জুটি স্থায়ী হতে দেননি সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম স্পেলের বল করতে এসেই নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ভাঙেন সাকিব। বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন রাচিন রবীন্দ্রকে। ১০ রানে ফেরেন অতিথি ওপেনার।আরেক ওপেনার টম ব্লান্ডেলকে আউট করেন শেখ মেহেদী হাসান। তরুণ এই অফ স্পিনারের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ব্লান্ডেড। স্পিন আশা করে ব্যাট চালিয়েছিলেন কিন্তু সোজা চলে যায় কিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৮ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। অবশ্য এরপর উইল ইয়ংকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ৪৩ রানের জুটি।জমে যাওয়া এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। নিজের পরের স্পেলে এসে ফেরান ইয়ংকে। বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে দেন অতিথি ক্রিকেটার। ২৮ বলে ২২ রান করেন তিনি।সতীর্থরা ফিরলেও উইকেট থিতু হয়ে যান অধিনায়ক ল্যাথাম। মাঝে আউট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। অধিনায়কের ব্যাটে চড়ে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলে নিউজিল্যান্ড। তবে শেষ পর্যন্ত হয়নি। ডেথ ওভারে সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজের বোলিংয়ে স্বস্তির জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে ৬৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ল্যাথাম।গত ম্যাচে স্পিনের উইকেট রান বেশি হয়নি। ওইম্যাচ নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়েছে। তবে এই ম্যাচে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। আগে ব্যাটিং করে টিকে ছিলেন ২০ ওভার পর্যন্ত। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।সাবধানী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের শুরুতে শুরুটা ভালো করেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। আগের ম্যাচে মাত্র এক রানে আউট হওয়া দুই ওপেনার এবার টিকে ছিলেন লম্বা সময়।যদিও শুরুতেই বিপদে পড়তে পারতেন লিটন দাস। ১.৩ ওভারের সময় ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তিনি। ওই সহজ ক্যাচ মিস করে লিটনকে বাঁচিয়ে দেন ডি গ্র্যান্ডহোম।জীবন পেয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান লিটন। যদিও পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে খুব একটা রান আসেনি। এরপর অবশ্য দুজনই হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেন। বেশ সময় পর্যন্ত টিকেও যান। কিন্তু থিতু হয়ে স্টাম্প হন লিটন।দশম ওভারে রবীন্দর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া বল অফে সরে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ব্যাটে-বলে মেলেনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রান করেন লিটন । ৫৭ বলে ভাঙে ৫৯ রানের ওপেনিং জুটি।ওপেনিং জুটি ভাঙার পরপর দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। লিটন ফেরার পর টপ অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে হতাশ করেন মুশফিক। রাচিন রবীন্দ্রর বলেই গোল্ডেন ডাকে ফেরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।চারে নেমে আজ থিতু হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ১২ রানের মাথায় ক্যাচ তুলে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। অবশ্য অল্পের জন্য বেঁচে যেতে পারতেন সাকিব। তাঁর উড়িয়ে মারা বল লং অফে ক্যাচ ধরতে গিয়ে তালগোল পাকিয়েছিলেন বেন সিয়ার্স। ভাগ্যভালো থাকায় ক্যাচ মিস হয়ে যাননি।এত ভালো শুরুর পর ১৩ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। উইকেটে থেকে চাপ সামলানোর চেষ্টা করেন ওপেনার নাঈম। ১৬তম ওভারে নাঈমের প্রতিরোধ ভাঙেন সেই রবীন্দ্র। ৩৯ বলে তিন বাউন্ডারিতে ৩৯ রান করে ফেরেন নাঈম। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া রবীন্দ্র নাঈমেরসহ মোট তিনটি উইকেট নেন। নাঈম ফেরার পর দায়িত্ব নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের ব্যাটে চড়ে শেষ পর্যন্ত ১৪১ রানে থামে বাংলাদেশ। ইনিংস শেষে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের সঙ্গে ১৩ রান করেন নুরুল হাসান সোহান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৬ (লিটন ৩৩, নাঈম ৩৯, মুশফিক ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, আফিফ ৩, সোহান ১৩; রবীন্দ্র ৪-০-২২-৩ , ম্যাকনকি ৪-০-২৪-১, বিন ১-০-১১-২, বেনেট ৪-০-৩২-১, অ্যাজাজ প্যাটেল ৪-০-২০-১, ব্রেসওয়েল ৩-০-৩০-০)।
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৩৭/৫(ব্লান্ডেল ৬, রবীন্দ্র ১০, ডি গ্র্যান্ডহোম ৮, নিকোলস ৬, ল্যাথাম ৬৫, ইয়ং ২২, ম্যাকনকি ১৫ ; সাকিব ৪-০-২৯-২, মেহেদী ৪-০-১২-২, সাইফউদ্দিন ৪-০-৩৬-০, মুস্তাফিজ ৪-০৩৪-০, নাসুম ৩-০-১৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)।
ফল : ৪ রানে জয়ী বাংলাদেশ।