সোমবার, জানুয়ারী ২০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট

0

ঢাকা অফিস: রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইয়াবা চোরাচালান চক্রটি বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারাই মূলত ইয়াবার বিস্তার করেছে সারাদেশে। প্রতিদিন কোনো না কোনো একজন রোহিঙ্গা নাগরিক ইয়াবা ও অস্ত্রসহ প্রশাসনের কাছে ধরা পড়ছে।এলাকাবাসী জানান, উখিয়া-টেকনাফের বিশাল স্থানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হওয়ায় বিস্তৃত এলাকায় সহজেই ধরা পড়ে না ইয়াবা কারবারিরা। তবে ছোট কারবারিরা আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অধরায় রয়ে গেছে রাঘববোয়ালরা। এ কারণে বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে ওঠার পর ইয়াবা বিক্রি করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। অনেকে ক্যাম্পের পাশেই সরকারি জায়গা দখল করে নিজ খরচে আলিশান বাড়িও করেছেন। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও চোখে পড়ছে। অভিযানও সমানতালে চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবশেষ সেনা নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানে রোহিঙ্গাদের অনেকেই ছিলেন ‘ইয়াবা ডন’। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তাদের সেই সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। অথচ স্থানীয়ভাবে অনেকটা ইয়াবা কারবার কমে গেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কিন্তু একদম বন্ধ করা যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের কারণে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ৩০টি শিবিরে ইয়াবাসহ মাদক বিক্রির চিহ্নিত আখড়া আছে পাঁচশরও বেশি। শরণার্থী শিবিরের বাইরেও রোহিঙ্গারা ইয়াবা বহন করছে। দুই দেশের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এদের নিয়ন্ত্রণ করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একাংশ মাদক কারবার, পরিবহন ও শিবিরের ঘরগুলোতে এসব মজুত রাখছে। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত। আর সে কারণে এটা বন্ধ হচ্ছে না। তাদের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। আবার তাদের মধ্যে মানবপাচারের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে একটি চক্র সামনে শীত মৌসুমকে টার্গেট করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক মানবপাচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এখন কক্সবাজারে সব পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনে নতুন কর্মকর্তা হওয়ায় ইয়াবা কারবারিরা স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যে ইয়াবা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ইয়াবার বিস্তার করছে উখিয়া-টেকনাফের বেশ কয়েকটি এলাকায়। প্রকাশ্যে মাদকের জমজমাট ব্যবসা চলছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছোট বড় মিলিয়ে যেসব স্পটে ইয়াবাসহ মাদকের রমরমা বেচাকিনা চলে সেগুলো হলো- উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, টেকনাফ সদরের মিঠাপানির ছড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, হ্নীলা মোচনী ক্যাম্প, উনছিপ্রাং ক্যাম্প, আলীখালী, লেদা, জাদিমোরা, সাবরাং-শাহপরীরদ্বীপ এলাকা। এসব এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এইসব মাদক কারবারির অনেকে বর্তমানে কোটিপতি। আবার অনেকে ইয়াবার টাকায় বাড়ি করেছেন চোখ ধাধানো। এরা বেশিরভাগ মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। মাদক কারবারিরা ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এফজেড, ফেজার, টু-টুয়েন্টি, ইয়ামাহা আর এক্সসহ নানা মডেলের মোটরসাইকেলে এদের চলাফেরা করতে দেখা যায়। এইসব মোটরসাইকেল এরা ইয়াবার বিনিময়ে কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসে। একটি মোটরসাইকেলের জন্য এক হাজার পিস ইয়াবা দিতে হয়। এদিকে শীত মৌসুমকে সামনে রেখে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক মানবপাচার চক্র সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা এলাকাভিত্তিক টিম গঠন করে রোহিঙ্গাদের নানা প্রলোভন দিয়ে সাগরপথে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাগরে ও জঙ্গলে নির্মম নির্যাতন করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, শীতের সময় সমুদ্র শান্ত থাকে। এই সুযোগ নিয়ে নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের চেষ্টা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে পয়েন্টগুলো থেকে মানবপাচারের ঘটনা বেশি ঘটে, এমন একটি চিহ্নিত এলাকা হিসেবে শাহপরীর দ্বীপকে দেখা হয়। এই দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য জানিয়েছেন, সেখানে লোকজন জড়ো করে ছোট ছোট নৌকার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের সমুদ্রের গভীরে নিয়ে বড় নৌকায় তুলে দেয়া হয় মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য। শাহপরীরদ্বীপের জসিম বলেন, শীতে সমুদ্র শান্ত থাকার সময়টাকে মানব পাচারকারীদের তাদের মৌসুম হিসেবে দেখে। এখন শীতের শুরুতেই দালালসহ পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে তিনি দাবি করেন। জসিম বলেন, এখন এই অবৈধ মানবপাচারের ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের ধরন পাল্টে গেছে। যাকে পাচার করা হচ্ছে, তার জীবিত শরীর মালেশিয়ায় পৌঁছানোর পর পাচারকারীরা অর্থ নিয়ে থাকে। পাচারের আগে এ নিয়ে মৌখিক চুক্তি হয়। পুলিশ বলেছে, রোহিঙ্গারা এখন দালালদের মূল টার্গেট বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও মনে করছেন। কক্সবাজার এপিবিএন এর পুলিশ সুপার হেমায়েত উদ্দিন বলেছেন, তাদের ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হয়েছে বলেই এখন মানবপাচারের চেষ্টা উদ্বেগজনক অবস্থায় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা না থাকলে শত শত হাজার হাজার মানুষ পাচার হতো। এখন চেষ্টা হলেই ধরা পড়ছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি ইয়াবা, অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে এবং ধরা পড়ছে।

Share.