ডেস্ক রিপোর্ট: কয়েকটি বিমানে উঠতে চেয়েও পারেননি বয়স পঁচিশের তরুণীটি। এরপর বন্ধ হয়ে গেছে বিমান চলাচল। বন্ধ হয়ে গেছে বিমানবন্দরের সব দরজা। বাধ্য হয়ে তরুণীর ঠায় হয় বিমানবন্দরের আগমন লাউঞ্জের বাইরে। তিন দিন ধরে সেখানেই একাকী কাটে তার দিন-রাত। অনাহারে। কেউ এগিয়ে আসেনি তার সাহায্যে। করোনার লকডাউনে ভারতের কলকাতায় বিমানবন্দরে আটকা তরুণীর এমনই খবর দিল সেখানকার গণমাধ্যম। বৃহস্পতিবার সকালে বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল-এর বাইরে একতলায় একটি বেঞ্চিতে তরুণীটি গুটিসুটি মেরে বসে ঘুমাচ্ছিলেন। তরুণীর পরনে আধভেজা, ময়লা ডেনিম। এই গরমেও গায়ে সাদা ফুলহাতা সোয়েটার। পায়ে মোজা, স্নিকার্স। কোলে ছোট একটা সবুজ ব্যাগ। পাশে বড় আর একটি ব্যাগ। বিমানবন্দর থেকে যাত্রী-বিমানের ওঠানামা বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৩৩ ঘণ্টা আগে। চারদিক নিস্তব্ধ। হাতে গোনা কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী ও অফিসার ঘুরে বেড়াচ্ছেন বন্দরের ভেতরে। তাদের ভাষ্য, গত তিন দিন ধরে ওই চত্বরেই ঘুরে বেড়ান এই তরুণী। পুলিশকে তারা বিষয়টি বলেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। তিন দিনের একাকী ধকলে স্বাভাবিকভাবেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তরুণী। তাই কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না। কিছু জিজ্ঞেস করলে, বিরক্ত হয়ে জবাব দেন তাকে যেন একা থাকতে দেওয়া হয়। ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি ও বাংলাও বলতে পারেন। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর সংবাদকর্মীরা তরুণীর কাছ থেকে জানতে পারেন, তার নাম অলকা কুমারী। বাড়ি দিল্লির কাছে গ্রেটার নয়ডায়। তার অভিযোগ, ‘এই একই প্রশ্নের উত্তর গত তিন দিনে অন্তত একশো বার দিয়েছি। আমি ক্লান্ত, বিরক্ত। সংবাদমাধ্যম, পুলিশ, নিরাপত্তা সংস্থা- সবাইকে ঘৃণা করি।’ অলকা একটি প্রোজেক্টের কাজে গত রবিবার কলকাতা যান। মঙ্গলবার তিনি কলকাতা থেকে দিল্লি ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো ফ্লাইটে জায়গা পাননি। এরপর থেকে তিনি বসে রয়েছেন বিমানবন্দরে। অলকার সঙ্গে কোনো টাকাপয়সা নেই। সঙ্গের পানিরা বোতলও খালি। পুলিশের অনুমান, গত দুই দিন ধরে তিনি অভুক্তও থাকতে পারেন। অলকার ফোনটাও ভেঙে গেছে। বলেন, ‘আমার কাছে নগদ টাকা নেই। হাজার পাঁচেক দরকার। কেউ যদি তার অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন, তা হলে আমি নেট ব্যাঙ্কিং মারফত টাকাটা ফেরত পাঠাব।’ বুধবার পণ্যবাহী দু’টি বিমান কলকাতা থেকে ওঠানামা করেছে। তার একটি গিয়েছে দিল্লি। অলকা জানান, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে সেই বিমানে তিনি দিল্লি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, অলকা যেহেতু গেটের বাইরে রয়েছেন, তাই তার দেখভালের দায়িত্ব পুলিশের। সিআইএসএফ সূত্রের খবর, বুধবার বিষয়টি স্থানীয় থানাকে জানানো সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিমানবন্দরের ডাক্তারদের দিয়ে অলকার পরীক্ষা করানো হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজারহাটের কোয়ারেনটাইন সেন্টারে।
সূত্র: আনন্দবাজার।