ঢাকা অফিস: চলমান ‘লকডাউনে’ শ্রমিকদের জন্য মাসিক সরকারি অনুদান দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এই দাবি জানান।মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই কোভিড-১৯ কালে অবশ্যই শ্রমিকদের সাবসিডি দিতে হবে। প্রত্যেক শ্রমিক নেতা, শ্রমিক কর্মী ভাই যারা আছেন তাদের অবশ্যই সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা করতে হবে। এই মুহূর্তে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় দাবি।বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই দাবিটা আজকে করছি যে, দেশে ইনফরমাল সেক্টরে যত শ্রমিক আছেন, আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে যত শ্রমিক আছেন, অন্যান্য কলকারখানার সঙ্গে যেসব শ্রমিক যুক্ত আছেন তাদের প্রত্যেককে মাসের একটা অনুদান অবশ্যই দিতে হবে যেটা অন্যদের দেওয়া হয়েছে।মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনাকালে শুধু মালিকদের দিলেই হবে না, শুধু ব্যাংক থেকে ঋণ দিলেই হবে না। আমি লন্ডনে আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলাম, সে একটা ফ্যাক্টরিতে…। সে আমাকে বলছে যে, আমি এখন খুব ভালো অবস্থায় আছি। কেনো লকডাউনে? সে বলছে যে, সরকার আমাকে দিচ্ছে ১৫শ পাউন্ড করে। এটাকেই বলে ওয়েল ফেয়ার স্টেট, এটাকে বলে মানুষের জন্য ভালোবাসা, কমিটমেন্ট টু দি পিপল। আসুন আমরা এই আন্দোলনটা গড়ে তুলি শ্রমিকদের নিয়ে যে, আজকে এই সময়ে তাদের ইনসেনটিভ দিতে হবে, তাদের ত্রাণ দিতে হবে, তাদের সহযোগিতা দিতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা আপনারা এখন কেনো জানি না, শুধু আনুষ্ঠানিকতায় চলে গেছি, আমরা দোয়া করছি, মিলাদ করছি, স্মরণ সভা করছি। সংগঠন গড়ে না তুললে আন্দোলন কিভাবে হবে? আপনার সরকার পরিবর্তন করতে হলে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে হলে তো প্রধান যে দুইটা শক্তি দরকার, একটা হচ্ছে ছাত্র সংগঠন, আরেকটি শ্রমিক সংগঠন। সেই সংগঠন তো আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পারছি না। সেটা তো আমাদের ব্যর্থতা। সেই কারণে আমি অনুরোধ করব, আসুন আমরা সবাই পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কথা বলি—কিভাবে সংগঠনগুলোকে আবার গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা করি।দলের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের দলের অনেক কষ্ট, অনেক দুঃসময়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। আমাদের প্রধান যিনি আমাদের নেতৃত্ব দেন যার কথায় আমরা অনুপ্রাণিত হই, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিন বছর ধরে আজকে কারাগারে। এটা ভাবা যায় না, কল্পনা করা যায় না। আজকে যিনি আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব, তিনি আট হাজার মাইল দূরে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। নতুন করে আবার শুরু হয়েছে এই কয়েকদিনে ২০ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। করোনায় আমাদের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সেলিমা আপা (সেলিমা রহমান), রুহুল কবির রিজভী থেকে শুরু করে অনেকে আজকে অসুস্থ হয়ে, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে। আমাদের মওদুদ ভাই (মওদুদ আহমদ) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমাদের রুহুল আলম চৌধুরী চলে গেছেন, আমাদের ইয়াং একজন নেতা খন্দকার আহাদসহ অনেকে চলে গেছেন। এই অবস্থা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে, আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের প্রয়াত সদস্য জাফরুল হাসানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাফরুল হাসান।জাফরুল হাসানের কর্মময় জীবনের কথা তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে দেখুন গ্রুপ হচ্ছে মালিকদের, তারা গাড়ি কিনছেন, বাড়ি কিনছেন, বিদেশে প্রপার্টি তৈরি করছেন। আর আমার শ্রমিক ভাইয়েরা, বোনেরা, তারা বস্তিতে একটা ঝুপড়ির মধ্যে বাস করছে, দুইবেলা ঠিকমতো খেতেও পায় না। দিস ইজ দি রিয়েলিটি। কেউ কথাও বলছি না এই বিষয়ে।সাবেক এ কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে জাফরুল ভাই চলে গেছেন। আমার বার বার তাঁর কথা মনে পড়ে এজন্য যে সত্যিকার অর্থে আজকাল এই ধরনের নেতা আর কোথায়? এক নজরুল ভাই (নজরুল ইসলাম খান) আছেন। বাতি জ্বালিয়ে আর তো আমি দেখতে পাই না। কারণ কোথায় কে জোরেশোরে কথা বলবেন, কার কথায় উজ্জীবিত হবে—এ্র বিষয়ে বোধহয় শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের এই বিষয়গুলো দেখা উচিত।দীর্ঘদিনের সহকর্মীর বর্ণাঢ্য জীবনকর্ম তুলে ধরতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আসুন, জাফর ভাইয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি এই শ্রদ্ধা নিবেদন হোক, এই শপথই আমরা করি যে, আপনি নাই কিন্তু আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা যারা বেঁচে আছি, যতদিন বেঁচে আছি আমরা ততদিন সংগঠনের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করব।’নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি দলের যে পদেই থাকি না কেনো আমি আপনাদেরই একজন সহকর্মী, আমি শ্রমিক আন্দোলনের একজন কর্মী। আমি সবসময় আপনাদের সাথে আছি, সবসময় থাকব ইনশা আল্লাহ, যেমন ছিলেন আমাদের প্রিয় ভাই জাফরুল হাসান।’জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল হাসান জুয়েল, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক স্কপ নেতা ওয়াজেদ-উল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, কেন্দ্রীয় নেতা এএম নাজিম উদ্দিন, সালাহউদ্দিন সরকার, মিয়া মো. মিজানুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আবুল খায়ের খাজা. এমজি ফারুক, আসাদুজ্জামান বাবুল, কোহিনুর মাহমুদ, মফিদুল ইসলাম মোহন, কাজী আমীর খসরু, খন্দকার জুলফিকার মতিন, প্রয়াত নেতার মেয়ে নাসরিন হাসান টিমা বক্তব্য দেন।