লন্ডনে সিঙ্গাপুরের এক শিক্ষার্থীর ওপর বর্ণবাদী হামলা

0

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেমন বাড়ছে, এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক। ভাইরাসটির উৎস চীন হওয়ায় চীনা নাগরিক হোক বা না হোক, একই রকম দেখতে মানুষদের দিকে অনেকেই বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। বিষয়টি যেমন অমানবিক, তেমনি বর্ণবাদীও। এবার তথাকথিত আধুনিক ও উন্নত দেশ যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনেই এমন বর্ণবাদী হামলার শিকার হলেন সিঙ্গাপুরের এক শিক্ষার্থী। আজ বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, জোনাথন মক নামে ২৩ বছর বয়সী ওই যুবক সোমবার ফেসবুকে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা অক্সফোর্ড স্ট্রিটে রাত সোয়া ৯টার দিকে তার ওপর হামলা চালায় একদল দৃর্বৃত্ত। হামলার কারণ ছিল মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে পূর্ব এশিয়ার নাগরিকদের ওপর যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষদের ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ বা আতঙ্ক। বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের মানসিকতাকে জেনোফোবিয়া বলা হয়। মক ফেসবুকে জানান, এক লোক প্রথমে তাকে সজোরে ঘুষি মারেন। এতে তার নাক ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। পরে ওই লোক তাকে লাথি মারার চেষ্টা করেন আর বলেন, ‘তোমাদের করোনাভাইরাস আমি আমার দেশে চাই না।’ আহত এ শিক্ষার্থী জানান, চিকিৎসক বলেছেন, হামলায় তার মুখের কয়েকটি হাঁড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এগুলো ঠিক করতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মকের ওপর বর্ণবাদী হামলার তদন্ত শুরু করেছে তারা। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তবে এখনও কাউকে আটক করা হয়নি। শুধু ভাইরাস সংক্রমণই নয়, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য কারণেও বাড়ছে বর্ণবাদী ঘটনা। জোনাথন মক জানান, গত সপ্তাহেরটাই তার সঙ্গে ঘটা প্রথম বর্ণবাদী ঘটনা নয়। তিনি বলেন, আমি দুই বছর ধরে লন্ডনে পড়াশোনা করছি। প্রতি বছরই আমার সঙ্গে বর্ণবাদী ঘটনা ঘটেছে, সেটা নির্দোষই হোক বা বিদ্বেষপ্রসূত। যারা আমাকে বলেছিলেন ‘লন্ডন বর্ণবাদী নয়’; তাদের বলবো, আরেকবার ভাবুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে যুক্তরাজ্যে মকের মতো বর্ণবাদী হামলার শিকার হয়েছেন আরও অনেকেই। এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক সংগঠন ‘স্টপ হেট ইউকে’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে স্টপ হেট ইউকের হেল্পলাইনে বর্ণবাদ, বৈষম্যমূলক বা মৌখিক নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ আসার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগীরা চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য ও এ কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারেন এমন ধারণা থেকেই এসব হয়রানির ঘটনা ঘটছে। একই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রেও। সেখানেও চীনাদের মতো মুখাবয়ব হওয়ায় বর্ণবাদী বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এর জন্য অজ্ঞতা ও ভুল তথ্য ছড়ানোকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক রোজালিন্ড চউ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের খবরে চীনাদের মতো দেখতে মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে, তবে কেউ মারা যাননি। যুক্তরাষ্ট্রে ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত নয়জন।

Share.