ডেস্ক রিপোর্ট: শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে মুসলিম ভোটারদের বহনকারী একটি বাসবহরে গুলি চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা তান্তিরিমালে এ হামলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শতাধিক গাড়ির একটি বহরকে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালায় হামলাকারীরা। শ্রীলঙ্কার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শনিবার স্থানীয় সময় ৭টায় শুরু হয়েছে, চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে মোট ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। মূলত এ নির্বাচন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)-এর সাজিথ প্রেমাদাসা এবং বিরোধী দল শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট (এসএলপিপি)-এর গোটাবায়া রাজাপক্ষের মধ্যে। শ্রীলঙ্কার ২২টি নির্বাচনি জেলায় প্রায় ১৩ হাজার ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এবারের নির্বাচনের জন্য নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ। এ নির্বাচনে মুসলিম ও তামিল ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যালঘুদের ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হবে প্রার্থীদের। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বন্দুকধারীরা বাসে প্রকাশ্য গুলি চালিয়েছে, পাথর নিক্ষেপ করেছে। এতে কমপক্ষে দুইটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’ পুলিশ বলছে, উপকূলীয় শহর পুত্তালাম থেকে পার্শ্ববর্তী মানার জেলায় যাচ্ছিলেন ওই মুসলিম ভোটাররা। তারা মানার জেলার ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। পরে পুলিশের টিম গিয়ে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দেয় এবং বাসের যাত্রীদের ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। তামিল অধ্যুষিত জাফনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই এই হামলা হলো। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ নির্বাচনকে সামনের রেখে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনী। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে পুলিশ জানিয়েছে, সেনাবাহিনী অবৈধভাবে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর ফলে বাসিন্দারা ভোটকেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়বেন। পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এমন খবর পাওয়া পর সেখানে গিয়ে পুলিশ তা সরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার ব্যাপারে স্থানীয় সেনা কমান্ডারদেরও সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে নিহত হন অন্তত ২৫৮ জন। ওই হামলার ক্ষত এখনও তাড়া করে বেড়ায় লঙ্কানদের। ফলে এবারের নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রাজধানী কলম্বোসহ পুরো দেশ। ২১ এপ্রিলের হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতার হামলা-অগ্নিসংযোগের শিকার হয় দেশটির মুসলমানরা। এর পর থেকে ইসলামফোবিয়া বা ইসলামভীতি বেড়েছে সেখানে। এ নিয়ে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনার খবর পাওয়া যায়। পরে গত ১৫ জুলাই লঙ্কান প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওই হামলার নেপথ্যে ছিল আন্তর্জাতিক মাদকচক্র। এতে বলা হয়, দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানকে নিরুৎসাহিত করতেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল।