সন্ধান মেলেনি টাইটানের, মাত্র ৭০ ঘণ্টার অক্সিজেন অবশিষ্ট

0

ডেস্ক রিপোর্টটাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আগ্রহী পর্যটকদের নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ সাবমেরিনটির সন্ধান এখনো মেলেনি। সেটির সন্ধানে এখন ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। সাবমেরিনটিতে পাঁচজন পর্যটক ছিলেন, আর ৭০ ঘণ্টা চলার মতো অক্সিজেন মজুদ আছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, রোববার সাগরে ডুব দেওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরে ছোট আকারের ওই ডুবোজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানির নিচে যাওয়ার সময় ডুবোজাহাজটিতে সাধারণত চার দিন চলার মতো জরুরি অক্সিজেন থাকে। এই ট্যুরের আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান ওশেনগেট জানিয়েছে, সাবমেরিনে থাকা পাঁচ পর্যটককে উদ্ধার করতে সবগুলো বিকল্প যাচাই করে দেখা হচ্ছে। বিবিসি বলছে, হারিয়ে যাওয়া ডুবোজাহাজটির নাম টাইটান সাবমার্সিবল। অনেকটা ট্রাক আকৃতির এই সাবমেরিনে পাঁচজন ব্যক্তি উঠতে পারেন। সরকারি সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সাগরে কাজ করে, এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শতাধিক বছর ধরে পানির নিচে পড়ে থাকা টাইটানিকের সামনের অংশ মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরের তিন হাজার ৮০০ মিটার বা সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে আটলান্টিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আট দিনের এই ভ্রমণের জন্য আড়াই লাখ ডলার খরচ করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাউগের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পর্যটকদের জীবিত খুঁজে বের করতে হলে তাদের হাতে ২৬ ঘণ্টার মতো সময় রয়েছে। তিনি বলেছেন, দুটি বিমান, একটি সাবমেরিন এবং সনার যন্ত্র নিয়ে সাবমেরিনটি খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু যে এলাকায় অভিযানটি পরিচালিত হচ্ছে, সেটি খুবই প্রত্যন্ত একটি এলাকা বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। অ্যাডমিরাল জন মাউগের জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা এই অভিযানকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং নিখোঁজ পর্যটকদের ‘নিরাপদে বাড়ি’ ফিরিয়ে আনতে সাধ্যের মধ্যে থাকা সবকিছুই করা হচ্ছে। দুভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে জানিয়ে কোস্ট গার্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, সাবমেরিনটি হয়তো কোথাও ভেসে উঠতে পারে, কিন্তু তাদের যোগাযোগ যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য বিমান দিয়ে সাগরের ওপরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সনার যন্ত্র ব্যবহার করে পানির নিচেও তল্লাশি করা হচ্ছে। কোস্ট গার্ডের জন মাউগের বলেছেন, ডুবোজাহাজটি পানির নিচে পাওয়া গেলে সেটিকে উদ্ধার করার জন্য নৌবাহিনীসহ তাদের আরও সহায়তা দরকার হবে। পোলার প্রিন্স নামের একটি জাহাজে বহন করে সাবমার্সিবল বা ছোট ডুবোজাহাজটিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেটি যাত্রীদের নিয়ে সাগরের গভীরে যায়।ডুবোজাহাজটি পানির নিচে যাওয়ার পৌনে দুই ঘণ্টা পরেই পোলার প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পোলার প্রিন্স নামের জাহাজে বহন করে সাবমার্সিবলটিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় নিখোঁজ সাবমেরিনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ধনকুবের ব্যবসায়ী এবং অভিযাত্রী হ্যামিশ হাডিং। এ সপ্তাহেই সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে হার্ডিং জানিয়েছিলেন যে, অবশেষে তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছিলেন, গত ৪০ বছরের মধ্যে নিউফাউন্ডল্যান্ডে চরম শীতের কারণে হয়তো টাইটানিকের ভগ্নাবশেষের কাছে এটাই এই বছরের প্রথম এবং একমাত্র মনুষ্যবাহী অভিযান হতে যাচ্ছে। এদিকে, যেসব সরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এই উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে ওশেনগেট। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে একটি অভিযান চলছে আর সামনের বছর আরও দুটি অভিযান হওয়ার কথা রয়েছে। এ ধরনের ছোট আকারের সাবমার্সিবল বা ডুবোজাহাজে সাধারণত একজন চালক এবং তিনজন যাত্রী থাকে। আরেকজন থাকে ‘কনটেন্ট এক্সপার্ট’ যিনি সাগরের নিচের সবকিছু পর্যটকদের কাছে ব্যাখ্যা করেন। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে এই ডুবোজাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল। সাধারণত সাগরের তলদেশে ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসতে আট ঘণ্টার মতো সময় লাগে।ওশেনগেটের তিনটা সাবমার্সিবল থাকলেও টাইটানিকের কাছে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র টাইটানের।

Share.