ডেস্ক রিপোর্ট: প্রায় তিন কোটি মানুষের সৌদি আরব বিশ্বজুড়ে বিলিয়নের বেশি মুসলিমের কাছে পবিত্র এক ভূমি। মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববী এবং ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর স্মৃতি হিসেবে দেশটির মর্যাদাও মুসল্লিদের কাছে অনেক। কিভাবে আজকের সৌদি আরব রাষ্ট্রের উৎপত্তি কিভাবে কিংবা আধুনিক সৌদির ইতিহাস সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি আমরা? সেই ইতিহাস বিশদভাবে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতেই আরটিভি অনলাইনের আয়োজনে সৌদি আরবের জন্মলগ্ন ও এর রাজতন্ত্রের ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে তিন পর্বের ধারাবাহিক। আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব-প্রথম পর্বে আমরা প্রথম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও সৌদ পরিবারের উত্থান সম্পর্কে জেনেছি। পরের পর্বে আমরা জেনেছি বিভিন্ন সময় সৌদ পরিবারের উত্থান-পতন ও সৌদি রাষ্ট্রের ভাঙা-গড়া নিয়ে। আব্দুল আজিজের প্রপৌত্র মুহাম্মাদ বিন নায়েফ আল সৌদকে গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং তার ক্রাউন প্রিন্স উপাধিও কেড়ে নেন কিং সালমান।এরপর দৃশ্যপটে নতুন রূপে এলেন মুহাম্মাদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। তাকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন কিং সালমান। একইসাথে তিনি এখন সৌদি আরবের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। বলা হয়েছে, তিনিই আসলে বাবা কিং সালমানের রাজক্ষমতার পেছনে আছেন মূল কারিগর হিসেবে। বর্তমান রাজার মৃত্যুর পর তিনিই হবেন সৌদি আরবের রাজা। তার স্ত্রীর নাম সারা বিনতে মাশরুর।রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে সৌদির মূল আয় ছিল ইসলাম কেন্দ্রীক। তাদের প্রধান উপার্জন ছিল হজ থেকে আয়। বিশের দশকে প্রতি বছর এক লাখ লোক হজ করতে যেতেন। কিন্তু ১৯৩৮ সালে যখন তেলখনি আবিষ্কৃত হলো তখন আব্দুল আজিজের সাম্রাজ্য বিস্তার নতুন উদ্যম পেল।১৯৩৯ এর শেষ দিক থেকে সৌদি আরব তেল রপ্তানি শুরু করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশিরভাগ তেল মিত্রবাহিনীর কাছে বিক্রি করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৩ সালের মাঝে তেল থেকে উপার্জন ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তখন থেকে সৌদি আরবের মূল আয় হলো এই তেল রপ্তানি।বর্তমানে সৌদি শাসন যে আসলে প্রিন্স মুহাম্মাদই করছেন সেটা সকলেই ধরে নিয়েছেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ক্রাউন প্রিন্স অনেকজন প্রভাবশালী প্রিন্সকে দুর্নীতির অভিযোগে বন্দী করেন রিয়াদের রিৎজ-কার্ল্টন বিলাসবহুল হোটেলে। কেউ বলেন এটা আসলেই দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, কেউ বা আবার বলেন এটা মূলত সিংহাসনে আরোহণের পথ সুগম করতে প্রিন্স মুহাম্মাদের একটি চাল।গত বছর ৮৩ মিলিয়ন মুসলিম হজ করতে গিয়েছে সৌদি আরবে, ৬০ মিলিয়নের বেশি গিয়েছে উমরাহ করতে। হজ থেকে গত বছর আয় হয় ১২ বিলিয়ন ডলার। আরব নিউজের ভাষ্যমতে, আসছে পাঁচ বছরে ২০২২ সাল পর্যন্ত হজ ও উমরাহ থেকে সৌদি আরবের আয় হবে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তেল থেকে সরে এসে পর্যটনের উপর তাই গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি।ধর্মীয় দিক বিবেচনা করলে, সুন্নি ইসলাম সৌদি আরবের প্রধান ধর্ম- সুন্নি ইসলামের সালাফি ভার্সন। ৭৫-৯০% হলো সুন্নি আর বাকিরা শিয়া। তাছাড়া ১৫ লাখের মতো খ্রিস্টান কর্মরত আছে সেখানে, তবে নাগরিক হিসেবে না। একই কথা হিন্দুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পিও রিসার্চ সেন্টারের মতে, দেশটিতে ৩ লাখ ৯০ হাজারের মত হিন্দু কর্মী রয়েছে।তবে এ কথা সত্য যে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। এর মাঝে রয়েছে নারী অধিকারের সীমাবদ্ধতা, মানবাধিকার লংঘন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রিন্স মুহাম্মাদের সিংহাসনে আসন্ন আরোহণকে অনেকে যেমন প্রগতিশীল বলছেন, তেমনই অনেকে একে দেখছেন মূল ইসলাম থেকে সরে আসা হিসেবে। তবে সৌদি পরিবার নিজে ইসলামের জন্য এত কিছু করেছে নাকি নিজেদের সৌদ সাম্রাজ্য প্রসার আর টিকিয়ে রাখবার জন্য করেছে তা বিতর্কের বিষয়।যদিও আধুনিক মানসিকতার প্রিন্স মুহাম্মাদ ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস করেছেন, নারীর ড্রাইভিং সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছেন। সৌদির পাবলিক কনসার্টে নারী সংগীতশিল্পীরা গান গেয়েছেন, নারী প্রবেশাধিকার সংবলিত প্রথম স্টেডিয়াম ও কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদের অধীনেই হচ্ছে। এগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও তিনি অভিযুক্ত ও নিন্দিত হয়েছেন মানবাধিকারকর্মী আটক, ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ, কাতার ও লেবাননের সাথে সম্পর্কের অবনতি, আত্মীয়দের গ্রেফতার এবং নানা সালাফি আলেমের গ্রেফতারের কারণে। তিনিই সৌদি আরবের আধুনিকায়নের জন্য ভিশন ২০৩০ প্রস্তাব করেছেন যার মাধ্যমে অনেক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন আসবে।এছাড়া পুরো সৌদি আরবজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানান ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থানকে নতুন করে সাজিয়ে তুলছেন প্রিন্স। মূলত তেল রপ্তানিমুখী অর্থনীতি থেকে সরে আসতেই পর্যটনের ওপর জোর দিয়েছেন যুবরাজ। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনে সবুজায়নেও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
সমলোচনা উপেক্ষা করে আধুনিক সৌদির পথে হাঁটছেন প্রিন্স সালমান
0
Share.