ঢাকা অফিস: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমালোচনা যারা করার তারা তো করবে। যারা বলছে, বলতে থাকুক। দেশের পরিস্থিতিতে এ আইন করা হয়েছে। আমার বয়স তো ৭৫ বছর। স্কুলজীবন থেকে রাস্তায় নামার অভ্যাস আছে। ১৯৬২ সাল থেকে রাজনীতি করে আসছি। দেশের সবাইকে আমার চেনা আছে। কারাগারে অসুস্থতার কারণে কেউ মারা গেলে কার কী করার আছে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ, আজকের বাংলাদেশ একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, আমি একজন নগণ্য সেবক মাত্র।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের ও এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কৃতিত্ব সম্পূর্ণই দেশের নাগরিকদের।প্রধানমন্ত্রী দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সর্বস্তরের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানান। নিজেকে দেশের একজন সেবক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দেশের একজন নগণ্য সেবকমাত্র। সব কৃতিত্ব দেশের মানুষের।’স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই সুখবর দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারপ্রধান। স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথাপিছু আয় যেখানে হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার—সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন আর বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩। জাতিসংঘের আইন অনুসারে, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির সভা থেকে তা ঘোষণা করা হয়। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেলে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তায় ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি-পর্ব চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে চলেছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশের পেছনে গত ১২ বছরের নিরলস পরিশ্রম রয়েছে। এই অর্জনে দেশের মানুষ কাজ করেছেন। সরকার নীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা করেছে। একযুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়ার বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের গৌরব তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করা হলো। তরুণ প্রজন্ম আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এর সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা উপলক্ষে এ প্রেস কনফারেন্স (ভার্চ্যুয়ালি) আয়োজন করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তবুও সরাসরি না, ভার্চুয়ালি। আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল প্রত্যয়নের সুসংবাদ দেয়ার জন্য। বাংলাদেশ গতকাল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।তিনি বলেন, পুরো জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। এসময় বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।তিনি আরও বলেন, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করতাম কখন দেশ চালানোর সুযোগ পেলে গ্রামের মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে কাজ করবো। কারণ দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বসবাস করেন গ্রামে। ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আসে। তখন থেকেই দেশের অবকাঠামো থেকে বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নে কাজ করেছি। ওই সময় কৃষি উৎপাদনের উপর জোর দিয়েছি, দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পর্ণ করেছি।শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পরবর্তী সময়ে যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারা দেশের মানুষের জন্য পুরনো কাপড় বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেন। গ্রাম উন্নয়নে শাসকরা এগিয়ে আসেনি। মানুষের হাতে কাজ ছিল না। সারা দিন কাজ করে দু’মুঠো চাল কিনে ঠিকমত ভাত খেতে পেতেন না। জনগণ এসব বঞ্ছনার কথা কাউকে বলতে পারতেন না।সংবাদ সম্মেলনে গণভবন থেকে যুক্ত হন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও দেশের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকরা উপস্থিতি ছিলেন।
সমালোচনা যারা করার তারা করবে : প্রধানমন্ত্রী
0
Share.