ডেস্ক রিপোর্ট: গত মাসে হঠাৎ করেই স্টকহোমের বিভিন্ন জায়গায় মধ্যরাতে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়, যা রীতিমত অবাক করে শহরটির অধিবাসীদের। কারণ শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় এর আগে নানা সময়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটলেও এবার যে রীতিমত ঘরের দুয়ারে। সুইডেনের পুলিশ নজিরবিহীন এ সব ঘটনার তদন্ত করছে, তবে বিস্ময়ের বিষয় হলো চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশটিতে অন্তত ৯৭টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বোমা স্কোয়াডকে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। “আমি এখানে বড় হয়েছি এবং আপনি অনুভব করবেন যে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠছে,” বলছিলেন জোয়েল নামে এক তরুণ। তার ঘরের সামনের দরজা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে আর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে জানালাগুলো।
কে দায়ী?
২০১৮ সালে দেশটিতে ১৬২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এবং শুধু মাত্র গত দু মাসেই অন্তত ত্রিশবার বোমা স্কোয়াডকে ডাকা হয়েছে। সুইডেনের ন্যাশনাল অপারেশন্স ডিপার্টমেন্টের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান লিন্ডা এই স্ট্রাফ বলছেন, ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভস ও হ্যান্ড গ্রেনেড এসব বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছে। তার মতে হামলাগুলো সন্ত্রাসী গ্যাংগুলো করেছে তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। “এটি একটি মারাত্মক অবস্থা। কিন্তু সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়, কারণ তারা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেনা”। এসব সন্ত্রাসী দলগুলোর সাথে বোঝাপড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত দল পাঠানো হয়েছে। তাদের সাথে সুইডিশ মিলিটারি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় আছে, যাদের আফ্রিকা ও আফগানিস্তানে বিস্ফোরক নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। “এটা সুইডেনে নতুন এবং সেজন্য আমরা সারা বিশ্ব থেকেই জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করছি,” বলছিলেন ম্যাটস লভনিং, ন্যাশনাল অপারেশন্স কমিটির প্রধান। তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞ আমির রোস্তামি এটিকে তুলনা করেছেন মেক্সিকোর পরিস্থিতির সাথে যেখানে গ্যাং কালচার মহামারির মতো। “কিন্তু এটি নজিরবিহীন ঘটনা সেসব দেশের জন্য যেখানে কোনো যুদ্ধ নেই বা সন্ত্রাসের দীর্ঘ কোনো ইতিহাস নেই,” তিনি বলছিলেন।
কোন এলাকাগুলোতে বিস্ফোরণ?
বেশিরভাগ বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো হয়েছে স্টকহোম, গুটেনবার্গ ও মালমো শহরের শহরতলী এলাকায়, যেখানে মূলত নিম্ন আয়ের লোকজন বসবাস করে। এ মাসে মালমো শহরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। স্টকহোমের উত্তরে শহরতলীর একটি এলাকা ব্রম্মায় আবাসিক এলাকায় একটি বিস্ফোরণে একটি ফ্ল্যাটের প্রবেশপথ ধ্বংস হয়ে যায়, জানালাগুলো উড়ে যায় ও গাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। আবার ঐতিহাসিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শহর লান্ড-এ একটি মুদি দোকানে হামলার ঘটনায় ২০ বছর বয়সী একজনকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। লিনকোপিংয়ে ফ্ল্যাটে হামলার ঘটনায় ২৫ জন আহত হয়েছে। সোডেরমালমে একসময় শ্রমজীবী মানুষ বসবাস করতো যা পরে নতুনভাবে গড়ে তোলা হয়। সেখানেই যে ভবনে বিস্ফোরণ হয় তা ছিলো একটি স্কুলের কাছে। “ঘটনার পরপরই যখন পুলিশ আশেপাশের রাস্তা বন্ধ করে দিলো তখন আমি বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম। সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম,” বলছিলেন মালিন ব্রাডশো, যিনি কাছেই বসবাস করেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি এবং পুলিশও কোনো মন্তব্য করেনি।
সুইডেনের ক্রিমিনাল গ্যাং কারা?
পুলিশের মতে অনেক সময় একই গ্যাং একাধিক ঘটনায় জড়িত এবং এগুলোর সাথে মাদক পাচারের জড়িত। সুইডেনে ২০১৮ সালে ৪৫টি রক্তক্ষয়ী বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে, অথচ ২০১১ সালে এমন ঘটনা ঘটেছে ১৭টি। কিন্তু তারা কেনো বিস্ফোরক ব্যবহারও বাড়িয়েছে তার কারণ এখনো অজানা। সুইডেনের পুলিশ সন্দেহভাজন বা সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের রেকর্ড সংরক্ষণ বা প্রকাশ করেনা। “তারা সুইডেনেই বেড়ে উঠেছে। দুর্বল আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে সবাই উঠে এসেছে। অনেকেই সম্ভবত দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী,” বলছিলেন লিন্ডা এইচ স্ট্রাফ। রক্ষণশীল লেখক মিরা অক্ষয় বলছেন তারা একই এলাকার এবং অনেকটা একই মানসিকতার। যা তাদের এক করতে সহায়তা করে। তারা ঠিক সুইডেনের সাথে অংশ হতে পারেনি। যদিও ব্রাডশ বিশ্বাস করেন মূলত অর্থনৈতিক কারণই প্রধানত অপরাধ বাড়ার জন্য দায়ী।
কর্তৃপক্ষ কি করছে?
পুলিশ বলছে তারা জড়িতদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছে কিন্তু ২০১৮ সালের ঘটনার প্রতি দশজনের একজনের শাস্তি হয়েছে। ন্যাশনাল অপারেশন্স ডিপার্টমেন্ট পুলিশের সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। সন্দেহভাজনদের খুঁজে পেতে আরও শক্তি বাড়ানোর কথা বলেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সোডেরমালম শহরের অধিবাসী আন্দ্রে হেরডেন্ট বলছেন, জোর দিতে হবে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর।