বিনোদন ডেস্ক: বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগতদের যে যে সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তার কোনোটারই মুখোমুখি হতে হয়নি অভিনেত্রী শিল্পা শেঠির ছোটবোন শমিতা শেঠি। ঘুরতে হয়নি পরিচালক বা প্রযোজকদের দরজায়। দাঁড়াতে হয়নি আপসের সামনেও। কোনো সিনেমা থেকে বাদ দেয়াও হয়নি তার অভিনীত চরিত্র। বলিউডে টিকে থাকার সব যোগ্যতা নিয়েই অভিনয় জীবনে এসেছিলেন তিনি।শমিতার বলিউডে অভিষেক হয়েছিল ২০০০ সালে। কিন্তু মাত্র সাত বছরে তার কেরিয়ার মুখ থুবড়ে পড়ে। বহিরাগত না হয়েও ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা মজবুত করতে পারেননি তিনি। অভিনয়ে আসার আগে বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রার কাছে তিনি কাজ শুরু করেন। মনীশ তাকে উৎসাহ দিতেন অভিনয়ের জন্য। মনীশের কথাতেই শমিতা আগ্রহী হন অভিনয় করতে।
এদিকে কাজের সূত্রে মনীশের কাছে মাঝে মাঝেই আসতেন তার পরিচালক ও প্রযোজক বন্ধু করণ জোহর। শমিতাকে দেখে পছন্দ হয় করণের। তিনি তাকে নিয়ে যান আদিত্য চোপড়ার কাছে। শমিতাকে আদিত্য তার পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন। কিন্তু শর্ত রাখেন তাকে আরও মোটা হতে হবে। বডিকে টোনড আপও করতে হবে। তিন মাসে পাঁচ কেজি ওজন বাড়িয়ে ‘মোহাব্বতেঁ’ ছবিতে অভিনয় করেন শমিতা। অমিতাভ-শাহরুখ-ঐশ্বরিয়ার এই তারকাখচিত ছবিতে অনেক নবাগতই অভিনয় করেছিলেন।শোনা যায়, শমিতাকে সে সময় আমির খান তার সুপারহিট ছবি ‘লগান’-এ অভিনয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু শমিতা বেছে নেন যশরাজ ফিল্মসকেই। ‘লগান’ যে এত সফল হবে, তা কেউই আগে অনুমান করেননি। অন্যদিকে, তারকাবহুল ‘মহাব্বতেঁ’ থেকেও নবীন অভিনেতাদের খুব একটা লাভ হয়নি তাদের কেরিয়ারের দিক দিয়ে।
‘মহাব্বতে’ ছবিতে অভিনয়ের সময়েই উদয় চোপড়া এবং শমিতা শেঠির সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। এও শোনা যায়, কেরিয়ারের প্রথমেই যশরাজের মতো বড় ব্যানার নাকি মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল শমিতার। তিনি ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম ছবির পরে শমিতার দ্বিতীয় ছবি মুক্তি পেতে সময় লেগেছিল চার বছর। কারণ তিনি নাকি যে কোনো ব্যানারে ছবি করতে আগ্রহী ছিলেন না। ‘সাথিয়াঁ’ ছবিতে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন তিনি। আইটেম ডান্সও করেছিলেন। কিছু দক্ষিণী ছবিতেও দেখা গিয়েছিল। তার বেশি কিছু নয়।
২০০৫ সালে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শমিতা।। কিন্তু কোনো ছবিতেই একক সুপারহিট নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। তাছাড়া অতিরিক্ত বাছাবাছির ফলে শমিতার কাছে সুযোগও কম আসছিল। একটা সময় তার কাছে অভিনয়ের সুযোগ আসা বন্ধ হয়ে গেল।কেরিয়ারের মতোই টানাপড়েন চলছিল শমিতার ব্যক্তিগত জীবনেও। উদয় চোপড়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল অল্প সময়ের। এ পর তার নাম শোনা গিয়েছিল আফতাব শিবদাসানির সঙ্গে। আফতাবের সঙ্গে শমিতার সম্পর্ক নাকি এগিয়েছিল অনেক দূর। আফতাবের বোনের বিয়েতে শমিতাকে দেখা গিয়েছিল পরিবারের সদস্যের মতোই। কিন্তু তার পরেও কেন তাদের সম্পর্ক ভেঙে গেল, তা জানা যায়নি। এরপর মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে শমিতার ঘনিষ্ঠতা উঠে আসে ফিল্মি গুঞ্জনে।
সম্পর্ক বা কেরিয়ার, কোনো দিকেই থিতু হতে পারেননি শমিতা। পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি সিরিয়াস সম্পর্কে ছিলেন। তাই মন দিতে পারেননি কেরিয়ারে। ফলে পিছিয়ে পড়েছিলেন। এখানেই তার ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করেন। কারণ তার মনে হয়েছিল, অভিনেতাদের কখনো প্রচারমাধ্যম বা প্রচারের আলো থেকে দূরে সরে যেতে নেই। তাতে আখেরে ক্ষতি হয় কেরিয়ারের।একসময় বড় পর্দায় সুযোগ না পেয়ে শমিতা গেলেন টেলিভিশনে। অংশ নিলেন ‘বিগ বস’-এর মতো রিয়ালিটি শোয়ে। কিন্তু দেড় মাসের বেশি থাকতে পারলেন না। কারণ সে সময় তার দিদি শিল্পা বিয়ে করছিলেন রাজ কুন্দ্রাকে। দিদির জীবনের এই বিশেষ মুহূর্তে তার পাশে থাকতে চেয়েছিলেন শমিতা। পরে অবশ্য বলেছিলেন, ‘বিগ বস’ তার ভালো লাগছিল না। সেখানকার পরিবেশ ও খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।
শিল্পার বিয়ের পরে শমিতা লন্ডনে চলে যান। ইন্টিরিয়র ডিজাইনিংয়ের কোর্স করে ফিরে আসেন ভারতে। এরপর তাকে পাওয়া যায় ইন্টিরিয়র ডিজাইনার হিসেবে। শমিতা জানান, আর অভিনয় করতে চান না। অভিনয় থেকে দূরে সরে গেলেও তাকে নিয়ে খবর ভেসে আসত ইন্ডাস্ট্রিতে। হরমন বাওয়েজার সঙ্গে নাকি তার সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু সেই সম্পর্কও পরিণতি পায়নি। অভিনয়েও ফিরতে পারেননি মূলস্রোতে।