সেই ছাত্রী আবারও অসুস্থ, নুর গ্রুপের হুমকির ‘প্রমাণ পেয়েছে’ পুলিশ

0

ঢাকা অফিস: ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে, তিনি এখনো ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।  গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত থেকে দুর্বলতার পাশাপাশি জ্বরে ভুগছেন তিনি। এই ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ার বিষয়ে এখনো অনড় রয়েছেন। আজ তার অনশনের ৮ম দিন চলছে। এর আগে অসুস্থ হওয়া পর গত শনিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে চলে আসেন। দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরসহ অন্যসব আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে  জানিয়েছেন সেই ছাত্রী। রাজধানীর লালবাগ ও কোতয়ালী থানায় ২ টি ধর্ষণ ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে মামলাসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় এজহারভুক্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এই জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিএমপি’র লালবাগ ডিভিশনের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব বিজয় তালুকদার  বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল ও নাজমুলকে রিমান্ডে নিয়ে তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। রিমান্ড শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের দুইজনকে আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। ডিসি আরো বলেন, রিমান্ডের বাইরেও প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছে। মামুনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সম্পর্কের বিষয়টি যে নুরসহ অন্যদের জানিয়েছে, তার সত্যতা পাওয়া গেছে। মূলত নির্যাতিত ওই ছাত্রী তাদের কাছে একটি সুরাহা চেয়েছিলো। কিন্তু বিষয়টিকে তারা পাত্তা দেয়নি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চরিত্র হননের হুমকির অভিযোগের ‘সত্যতা পাওয়া গেছে’ বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানা গেছে। বেশ কিছু ক্লু নিয়েই মামলাগুলোর তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা (নং-২৮) দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী। মামলাটিতে ৬ জন এজহারনামীয় অভিযুক্তের মধ্যে নুরের নাম ৩ নম্বরে রয়েছে। মামলায় নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।  এজহার অনুযায়ী মামলার আসামিরা হলেন- হাসান আল মামুন, নাজমুল হাসান সোহাগ, নুরুল হক নুর, মো. সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ হিল বাকি। এরপরের দিন, ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর কোতয়ালী থানায় ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল অ্যাক্টে মামলা (নং-৩৪) দায়ের করেন সেই ছাত্রী। লালবাগ থানায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি কোতয়ালী থানাতেও তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেন। দুই মামলাতেই ভিপি নুর ৩ নম্বর আসামি এবং তার বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় মূল অভিযুক্ত বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা হাসান আল মামুন (২৮)। অপরদিকে কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলায় মূল অভিযুক্ত বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ (২৮)। মামলা দু’টির এজহার থেকে জানা যায়, একই বিভাগে পড়াশোনা করা এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে সেই ছাত্রীর ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে সেই ছাত্রীকে ‘ধর্ষণ’ করেন। পরে সোহাগও গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেই ছাত্রীকেই লঞ্চে করে চাঁদপুর নিয়ে যায় এবং ফেরার পথে লঞ্চের কেবিনে ‘ধর্ষণ করেন’। মামলা দু’টির এজহারে আরও অভিযোগ করা হয়, এই দুই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সেই ছাত্রী ভিপি নুরের সঙ্গে দেখা করেন। নুর তাকে প্রথমে ‘মীমাংসা’ করে দেয়ার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানি করার’ হুমকি দেন। সবশেষ গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন সেই ছাত্রী। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

Share.