ঢাকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ শনিবার দুপুরে ব্র্যাক-বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। নিরাপদ ও ভ্ৰমণবান্ধব সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত দ্বিতীয়বারের মতো ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা হয়েছে।’ এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা এখনো আমাদের বড় দুর্ভাবনা। কিছু পদক্ষেপ সংখ্যাগতভাবে কমিয়ে আনলেও প্রতিদিনই ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। আমার প্রতিটি সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার সংবাদ দিয়ে। তখন নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। তবে আমরা থেমে নেই। আমাদের প্রচেষ্টা অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে।’মন্ত্রী বলেন, ‘একসময়ের মরণফাঁদ নামে খ্যাত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্ল্যাকস্পটে ডিভাইডার স্থাপনসহ সরলীকরণ করায় সেখানে দুর্ঘটনা অনেকটা নেই বললেই চলে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা দেশব্যাপী ১২১টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করেছি। ডিভাইডার থাকলে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো যায়। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গত এক দশকে প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। এতে মহাসড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষের মতো দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’সরকার এখন যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তা আরো ৩০ বছর আগে প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সে সময়ের সরকারগুলো তা চিন্তায় আনেনি। ঢাকা মহানগরী বা আশপাশের জন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিবহন পরিকল্পনা ছিল না। আমরা জাইকার সহায়তা নিয়ে প্রণয়ন করেছি দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান। শুধু তাই নয়, আমরা প্রণয়ন করেছি দীর্ঘমেয়াদি রোড মাস্টারপ্ল্যান।’গত কয়েক বছরে যোগাযোগ-অবকাঠামো অনেক উন্নয়ন হলেও সেই তুলনায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও চালু করা হয়েছে রোড সেফটি অডিট।’নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালকের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার পেশাজীবী গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়িয়ে চলেছে। এ সুবিধা পর্যায়ক্রমে আমরা উপজেলা পর্যন্ত বাড়াব। গত দুই অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার পেশাজীবী চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’নারী গাড়িচালক তৈরির সুযোগ বাড়ানোর কথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, গাড়ি চালনায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা অধিক সাবধানী এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সরকার অধিক সংখ্যায় নারীচালকের সংখ্যা বাড়াতে চায়।সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেসরকারি পর্যায়ে ব্র্যাক এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগকে স্বাগত জানান মন্ত্রী।সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ যুক্ত হলে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়। আমার বিশ্বাস, এ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হলে এবং সরকারের বাস্তবায়নাধীন কাজ শেষ হলে ফ্যাটালিটি রেইট অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০-এর আগেই অর্জন সম্ভব হবে।’
সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগে কমাতে কাজ করছে সরকার : ওবায়দুল কাদের
0
Share.