১৬ ডিসেম্বর দেশের রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হবে: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

0

ঢাকা অফিস: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এবছরের ১৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের তালিকা ঘোষণা করা হবে। আগামী জানুয়ারি মাসে আমাদের স্বাধীনতার পূর্তি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধারা কি কি সুযোগ সুবিধা পাবেন তা পরিচয় পত্রের পেছনে লেখা থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলে যানবাহনের ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের খরচ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসব সুযোগ সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি করে বাড়ি উপহার দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব প্রতিটি বাড়ির মূল্য হবে ১৫ লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা নিয়ে অসন্তোষ আছে। যা হওয়া উচিত তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর শত বর্ষপূর্তির বছর ২০২০সালে তা পূরণ করবেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা করা হবে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের কবর একই ডিজাইনে করা হবে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল কবর (যারা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরসহ) একই ডিজাইনে করার কাজ শুরু হবে। বিসিএস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবইয়ে মুক্তির সংগ্রাম এবং মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের ভুমিকা নিয়ে লেখা সংযুক্ত করা হবে। পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের ভূমিকার উপর মোট একশ’ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। শুক্রবার গাজীপুর জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উদ্বোধকের বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ওইসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খলনায়ক জিয়াউর রহমানকে মহানায়ক প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা মানুষ ধরে রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচি নিয়ে আজ তার কণ্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। সে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে এদেশের শহীদদের রক্ত সফল হবে। দেশের অর্থনীতির মুক্তির লক্ষ্যে আজ আমাদেরকে ঐক্যবব্ধ হতে হবে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা যারা জীবনকে বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আমাদের প্রত্যেককে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে লুটপাট করেছে। তারা এতিমদের টাকাও ছাড় দেয়নি। তারা হাওয়া ভবন- খোয়াব ভবনে বসে পরিকল্পনা করে পাকিস্থান থেকে গ্রেনেড এনে ন্যাক্কারজনক গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেই আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি, দেশ রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের রয়েছে। তাই স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তি যেন আর মাথা উঁচু করে দাড়াতে না পারে সেজন্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মো. রশিদুল আলম। গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ মো. আখতারুজ্জামান, গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন সবুজ, ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাংসদ মো. বেনজীর আহমেদ, নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মোতালেব, ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন প্রমূখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকালীন তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বর্তমানে তাদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহানগরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, তাদের নামে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ ও তাদের সন্তানদের চাকুরির ব্যবস্থা করা হবে। মহনগরীর উল্লেখযোগ্য স্থানে তাদের জন্য উন্নত কবরস্থান নির্মাণ করা হবে। শেরপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধার সাবেক কমান্ডার নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, তারা তাদের ভাতা বৃদ্ধিরও অনুরোধ জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন আমলারা। মুক্তিযেদ্ধাদের সংগঠনটির কার্যক্রম নিজেরাই পরিচালনার জন্য তারা নির্বাচন দাবি করেছেন। নেত্রকোণা জেলা মুক্তিযেদ্ধা সাবেক কমান্ডার মো. নুরূল আমিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি আমাদের আদর্শের পিতা। প্রধানমন্ত্রী আদর্শের বোন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি এবং চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কোটা পূণর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।

Share.