ঢাকা অফিস: আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। এরই মধ্যে কেটে গেছে ১৭ টি বছর, ইতিহাসের এ দিনে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় ঘটে গ্রেনেড হামলার মতো বর্বরোচিত ঘটনা। ইতিহাসের নেক্কারজনক সে ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩’শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন, যাদের অনেকেই বেঁচে আছেন, কাটাচ্ছেন দূর্বিসহ যন্ত্রনাময় জীবন। সে ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেত্রী আইভি রহমানসহ মারা যান ২৪ জন।সেদিন অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ঢাকা জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাভারের মাহবুবা পারভীন। ভয়াবহ সে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন পারভীন। রক্তাক্ত সংজ্ঞাহীন মাহবুবা পারভীনকে মৃত ভেবে সেদিন লাশ ঘরে ফেলে রাখা হয়েছিলো। সেখানে ৬ ঘন্টা পর তৎকালীন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার নিহতদের লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে মাহবুবা পারভীনকে জীবিত দেখতে পান।এরপর তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর ৭২ ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরে এলেও দেশের চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আওয়ামী দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তখন মাহবুবা পারভীনকে কোলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান। সেসময় হাসপাতাল থেকেই জানানো হয় গ্রেনেড হামলায় আহত মাহবুবার শরীরে ১৮’শ স্প্রিন্টার মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। চিকিৎসা শেষে ৩ মাস পর সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এলেও মাহবুবার শরীরে রয়ে যায় সেসব স্প্রিন্টার। সেসব স্প্রিন্টারের মধ্যে মাথার স্প্রিন্টারগুলো তাকে প্রতিনিয়ত যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছে। স্প্রিন্টারের যন্ত্রনা বেড়ে গেলে তিনি পাগলের মতো হয়ে যান, প্রতিরাতেই তাকে প্রায় জেগে কাটাতে হয়। এর মাঝে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে মাথা থেকে দুটি স্প্রিন্টার বের করা হয়। কলিকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন সময়ে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তথন ব্যাংকক যাবার কথা জানিয়ে দিলেও তা আর হয়ে উঠেনি মাহবুবার। এরি মধ্যে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর জীবন সঙ্গী ফ্লাইট সার্জেন্ট(অব:) এম এ মাসুদ স্টোক করে মারা যান। বর্তমানে দু’সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকুরী করছেন এবং ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের পরিবার নিয়ে ডেনমার্কে পিএইচডি করছেন। অদম্য মনোবল আর প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকা মাহাবুবার প্রতিটি সময় যন্ত্রনাময় কষ্টকর হলেও বাংলার মাটিতে দেখে যেতে চান হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। মাহবুবা পারভীন আবেগ আপ্লুত কন্ঠে জানান, যাদের ষড়যন্ত্রে আজ তার জীবন যন্ত্রনাময়, যাদের ষড়যন্ত্রে নিভে গেছে ২৪টি প্রাণ, যাদের ষড়যন্ত্রে তার মতো ৩’শতাধিক আহতের জীবনে স্বাভাবিক সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে গেছে, যাদের কারণে শরীরের স্প্রিন্টারের যন্ত্রনায় কাতর থাকেন, রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে সেইসব সন্ত্রাসীদের শাস্তির দেখে যেতে চাই। সেই স্মৃতিময় জীবনের ফ্রেমে ধরা ছবি গুলোকেই সঙ্গী করে অসুস্থ মাহবুবা বেঁচে আছেন। চার দেয়ালের ভিতরেই যেন জীবন থেমে গেছে মাহবুবার। বসে বসে স্মৃতির ফ্রেম দেখা, বই পড়া আর লাঠিতে ভর করে ঘরের ভিতর পায়চারী করেই সময় কাটে তার। এসবের মাঝেই দূর্বিসহ এক জীবনের যন্ত্রনাদায়ক প্রতিটি মুহুর্ত কাটছে স্বর্প্ন পূরণের আশায়, দেখে যেতে চান ঘাতক খুনিদের বিচার। তাদের সকলের ফাঁসি দাবি করেন তিনি। তিনি তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া সহ চক্রান্তে লিপ্ত সকলের ফাঁসির দাবি জানান। নিজের মৃত্যুর পূর্বে তিনি বিচার দেখে যেতে চান অপরাধীদের।মাহবুবা পারভীন জানান, দূর্বিসহ সেদিনের কথা কিছুতেই ভুলতে পারেননি তিনি। আজও যেন চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে সেই ভয়াল দিনটির কথা। ঘুমের ঘরে আজও ভয়ে ফুপরে কেঁদে উঠেন, সেদিনের গ্রেনেড হামলার বিকট শব্দ, মানুষের ছোটা-ছুটি, রক্তাক্ত চারিধার, নিজের জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়ে যাবার পূর্বের সকল স্মৃতি ভয়ঙ্কর রুপে চোখে ভেসে উঠে চোখের পর্দায়। দূর্বিসহ সেই স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও তা যেন তার পিছু ছাড়ছে না।মাহবুবা পারভীন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় তিনি বেঁচে আছেন। প্রতিমাসে চিকিৎসা খরচের জন্য ১০’হাজার টাকা দিচ্ছেন। এককালীন ১০লক্ষ টাকা সঞ্চয় পত্র করে দিয়েছেন। যে টাকা তিনি পান তা দিয়ে সংসার খরচ চালান। ইতিমধ্যে বসবাস করার জন্য ১৪’শত স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছেন তিনি।প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাহবুবা জানান, মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ ও ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে আছেন। একসময় যাদের সাথে ঢাকা ও সাভারে রাজনীতি করেছেন, রাজপথে ছিলেন, মিছিল-মিটিং করেছেন তারা কেউ তার খবর রাখেন না। দেখলেও মুখ ফিরিয়ে নেন।টগবগে উদ্যোমী মাহবুবা আজ অসুস্থ। বেঁচে থাকা জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটু শান্তিতে ঘুমুতে চান, স্প্রিন্টারের তীব্র যন্ত্রনায় পাগলপ্রায় মাহবুবা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন যেন তাকে উন্নত চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা করেন। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন এমনটাই প্রত্যাশা মাহবুবা পারভীনের।
১৮’শ স্প্রিন্টারের তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছেন মাহবুবা পারভীন
0
Share.