বিনোদন ডেস্ক: একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকেরকে রাজধানীর বনানী গোরস্থান মসজিদে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। মৃত্যুর ২ দিন আগে তার শরীরের করোনার ভাইস শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছেন আলী যাকেরের ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের। আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০ টা ০২ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্টাট্যাস দিয়ে তিনি এসব তথ্য জানান। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘চার বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধের পর বাবা আজকে সকাল ৬ টা ৪০ এ চলে গেলো।ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। উনি যেই দোয়া এবং ভালোবাসা পেয়েছেন তার জন্য আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞ। মৃত্যুর দুই দিন আগে বাবার করোনা শনাক্ত হয়। বাবার নামাজ এ জানাজা আজ বাদ আসর বনানী গোরস্থান মসজিদে পড়া হবে।’ বরেণ্য এ অভিনেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মরদেহ রাখা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে গুণী ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) পৃথক শোকবার্তায় তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আলী যাকের। গেলো ৪ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন গুণী অভিনেতা। এছাড়া বার্ধক্যজনিত নানা রোগেও ভুগছিলেন তিনি। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার আলী যাকেরকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। গেলো ৬ নভেম্বর নিজ বাসায় ঘরোয়া আয়োজনে ৭৬তম জন্মদিন পালন করেন এ অভিনেতা। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক পাস করে নটরডেমে ভর্তি হন আলী যাকের। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। অনার্স পড়াকালেই ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। অনার্স শেষ হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে চলে যান করাচি। সেখানেই প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকের। ১৯৬৯ সালে ঢাকায় ফিরেন আসেন। ১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন তিনি। ওই দলে আতাউর রহমানের নির্দেশনায় বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা। আলী যাকের ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাভিশনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠান ভালোবাসার বাংলাদেশ উপস্থাপনা করেন।
২ দিন আগে আলী যাকেরের করোনা শনাক্ত হয়, জানাজা-দাফন বনানীতে
0
Share.