ঢাকা অফিস: জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৩৬তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজক হয়েছে বাংলাদেশ। চারদিনব্যাপী ৩৫তম সম্মেলনের সমাপনী শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে শুক্রবার এই ঘোষণা দেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৬টি সদস্য দেশের মন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে অংশ নেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে এবং স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছরের প্রাক্কালে এই অর্জন দেশের জন্য বিরাট গর্বের এবং সম্মানের বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও’র) ৩৫তম এশিয়া ও প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনের সমাপনী শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান, খাদ্যসচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এবং এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন উপস্থিত ছিলেন। ৩৫তম সম্মেলনের আয়োজক ছিল ভুটান। দুইবছর পর পর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাই ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের এফএও সংস্থাতে যোগদানের পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এই সম্মান পেয়েছে। কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকায় ৩৬তম অধিবেশন এই অঞ্চলের দেশগুলোর অর্জন, সাফল্য, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন বিষয়ে মতবিনমিয় ও পারস্পরকি সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। ব্রিফিংকালে মন্ত্রী বলেন, ৩৬তম সম্মেলন বাংলাদেশে আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের ওপর চীন, ভারত, ভুটান, ইরান, তিমুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ার সরাসরি সমর্থন এবং অন্যান্য সদস্যদেশসমূহ সম্মতি প্রদান করে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলন একটি আনুষ্ঠানিক ফোরাম যেখানে সদস্য দেশসমূহের কৃষিমন্ত্রীবৃন্দ এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাগণ খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন। মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত ৪০ বছরে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাদযোগ্য জমি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের এ অর্জন অন্যান্য সদস্যদেশগুলোর জন্য রোল মডেল ও উদাহরণ । ব্রিফিংকালে মন্ত্রী জানান, ভুটান এবারের ৩৫ তম এশিয়া-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলন ১-৪ সেপ্টেম্বর সময়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজন করেছে। দুই বছর পর পর এই রিজিওনাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৬টি সদস্যদেশের মধ্যে ৪১টি দেশের মন্ত্রিবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি, অ্যাকাডেমিয়া এবং খাদ্য ও কৃষি খাতের টেকনিক্যাল এক্সপার্টসহ ৪০০ বেশি প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছে। মন্ত্রী বলেন, মহামারি করোনা, ঘূর্ণিঝড় আম্পান, চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যাসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর অধীন সকল দপ্তরসমূহ করোনা ঝুঁকির মধ্যেও অত্যন্ত সজাগ, সক্রিয় রয়েছে। ফলে করোনাকালেও আমাদের খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রয়েছে । করোনার কারণে দেশে খাদ্যের কোন সংকট হবে না বলে আশা করি। জানা গেছে, করোনার কারণে ১ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এবারের সম্মেলন অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী পর্যায়ের সেশনে ৩১ জন মন্ত্রী ২৮জন ভাইসমন্ত্রী অংশ নেন। বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশে ৬টি মন্ত্রণালয় যেমন, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য, মৎস ও প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অংশ গ্রহণ করেছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে আরো অংশ নেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মুজমদার, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, খাদ্যসচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারু খানুম, ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রৌফ, পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, মৎস মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব মো. তৌফিকুল আরিফ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ন সচিব রাব্বি মিয়া, পরিবেশ মন্ত্রণালয়েল যুগ্ন সচিব মো. আশফাকুল ইসলাম বাবুূল।
উল্লেখ্য, এই সম্মেলন এখন পর্যন্ত ভারত ৪বার, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড প্রত্যেকে ৩বার, চীন, কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম দুবার, ভুটান, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা প্রক্যেকে একবার করে আয়োজন করেছে।