৫ আগস্ট শহীদ মুনতাসির তাঁর মাকে বলেছিলেন, ‘আমি আজ আর ফিরব না’

0

ঢাক অফিস:বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক উপপরিচালক, সত্তরোর্ধ্ব সৈয়দ গাজিউর রহমান এখনো বিশ্বাস করতে পারেন না, তার একমাত্র সন্তান সৈয়দ মুনতাসির রহমান আর কখনো ফিরবে না। ৫ আগস্টের সকালে বাবা-মা তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলেন। বিপদের আশঙ্কায় তারা তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। গাজিউরের ভাষায়, ‘আমি এক মুহূর্তের জন্য ওয়াশরুমে গেলে, সে মায়ের নিষেধ অমান্য করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।’সেদিন মুনতাসিরের মা শিরিন সুলতানা তাকে কঠোরভাবে বলেছিলেন, ‘যদি আজ আন্দোলনে যায়, তাহলে আর ঘরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’ মুনতাসিরের উত্তর ছিল, ‘আজ আমি ফিরব না।’ সেই কথাই সত্যি হলো — সে আর কখনোই ফিরল না।মুনতাসির রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টায় অংশ নেন মুনতাসির। সেদিন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।এই আন্দোলনের সফল পরিণতিতে প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে মুনতাসির রাস্তায় নেমেছিল, তার বিজয় সে নিজ চোখে দেখে যেতে পারেনি। বিজয়ের মাত্র এক-দুই ঘণ্টা আগে একটি গুলি তার জীবন কেড়ে নেয়।মুনতাসির তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিল সে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন — সবখানেই ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। বাবার প্রস্তাব ছিল গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার, কিন্তু সে ইংরেজি ও কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হয়েছিল দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।গাজিউর রহমান জানান, ‘আমার ছেলে সবসময় আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকত, জাতীয় পতাকার ছবি আঁকা টি-শার্ট গায়ে দিত, মাথায় পতাকা বাঁধত। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মুনতাসির কখনও পিছপা হয়নি।’ পুলিশি নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে মুনতাসির তার আদর্শে অটল ছিল।৫ আগস্টে ছেলের খোঁজ না পেয়ে গাজিউর দিনভর হাসপাতাল খুঁজেছেন। শেষমেশ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এক আত্মীয়ের সহায়তায় মুনতাসিরের মরদেহ পান তিনি। ‘অগণিত মৃতদেহের স্তূপের নিচে পড়ে ছিল আমার মুনতাসির।’ কোনো পোস্টমর্টেম ছাড়াই কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে তাকে দাফন করা হয়।মুনতাসিরের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন অসম্পূর্ণই রয়ে গেল। ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছেন গাজিউর। তার দাবি, ‘আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’এই পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি এখনো তাদের জীবনে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। ‘আমি জানি না আল্লাহ আমাদের কীসের পরীক্ষা নিচ্ছেন। বহুদিন চাওয়ার পর আল্লাহ আমাদের তাকে দিয়েছিলেন,’ বলছিলেন শোকাহত গাজিউর রহমান।

Share.