বাংলাদেশ থেকে সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের শাল্লার ছায়ার হাওরের মাউতির বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে হাজারো কৃষকের ফসল ডুবেছে। রবিবার ভোরের এ ঘটনায় সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা, নেত্রকোনার কালিয়াজুরি, মদন, কিশোগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন উপজেলার কৃষকরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর পেছনে বাঁধ নির্মাণে দুর্বলতাকে দায়ী করছেন কৃষকরা। শাল্লা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু জানান, এই হাওরে সবচেয়ে বেশি জমি শাল্লা উপজেলার, চার হাজার ৬৩৭ হেক্টর। কিছু জমি কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন ও কিছু জমি নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষকদের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে, বাকি অর্ধেক বাকি আছে। এ অবস্থায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এলাকাবাসী জানান, রবিবার ভোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি নির্মিত বাঁধটিতে ফাটল দেখা দেয়। একপর্যায়ে বাঁধ ভেঙে যায় এবং হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। পরে বহু কৃষক তাদের অবশিষ্ট জমির ধান কাটতে হাওরে নামেন। কৃষকরা জানান, কৃপেন্দ্র দাসকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি করে ২২ লাখ টাকার এই প্রকল্প দেওয়া হয়, মূলত তিনি কৃষকই নন। কৃপেন্দ্র সিলেটে অবস্থান করেন। তাই বাঁধের কাজে নানা দুর্বলতা ছিল। এই দুর্বলতার কারণেই বাঁধ ভেঙে হাওরের কাটার বাকি অবশিষ্ট জমির ধান তলিয়ে যাচ্ছে। রবিবার ভোরে মাউতির বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে জানিয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা সভাপতি তরুণ কান্তি দাস বলেন, এর আগে এভাবে কোনো দিন বাঁধ ভাঙেনি। শনিবার সন্ধ্যায়ও কিছু লোক পিআইসির সভাপতি কৃপেন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাসকে বাঁধে বুরুঙ্গার কথা জানান। কিন্তু তারা আমলে নেননি। রোববার ভোরে যখন বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু হয়, তখনও চিৎকার দিলে, মাইকে প্রচার দিলে বাঁধ ঠেকানো যেত বলে মনে করেন তিনি। তরুণ কান্তি দাসের ভাষ্য, হাওরের ৩০ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে কৃষকের ৫০ ভাগ ক্ষতি হবে। কারণ তারা ধান কেটে ক্ষেতেই রেখেছিলেন। এই ধান তুলে আনার সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে হাজারো কৃষককে। দুই দিনে হাওরে গলাসমান পানি হবে। এরপর অসহায় হয়ে যাবেন তারা। এদিকে হাওরের ৯০ ভাগ ফসল কাটা শেষ বলে দাবি করেছেন শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব। তিনি বলেন, শনিবার রাত ১১টায় কালবৈশাখী হচ্ছিল। ওই সময় তদারকিতে কেউ না থাকায় বাঁধ ভেঙেছে। এর আগে গত ২১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুরের দুটি বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে রয়েছে জেলার দিরাইয়ের অন্যতম বৃহৎ হাওর বরাম। হাওরপাড়ের চণ্ডিপুর-খেজাউড়ার মাঝামাঝি অংশ দিয়ে কালনী নদীর পাড় উপচে পানি ঢুকে পড়ে। এই হাওরে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি চাষ হয়।
বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ছায়ার হাওর, হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত
0
Share.