বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে ৩ ধরনের ভাইরাস

0

ডেস্ক রিপোর্ট: গত তিন মাস ধরে বিশ্বব্যবস্থাকে স্থবির করে রেখেছে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস (সারস-কভ-২)। এখন পর্যন্ত এর প্রকোপে সৃষ্ট কভিড-১৯ রোগে মারা গেছেন প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখের বেশি। কিন্তু ভাইরাসের দৌরাত্ম এতেই থেমে নেই। গত বুধবার পিনাস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রানঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। গবেষকরা বলছেন, মানবদেহে প্রবেশের পর ভাইরাসটি দ্রুত গতিতে বিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে তিন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। এ খবর দিয়েছে দ্য ডেইলি মেইল। খবরে বলা হয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের জিনগত ইতিহাস নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এতে তারা কাছাকাছি পর্যায়ের কিন্তু তিনটি ভিন্ন ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণ দেখতে পেয়েছেন। এদের টাইপ-এ, টাইপ-বি ও টাইপ-সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এই গবেষণা অনুসারে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি হারে বিস্তার লাভ করছে টাইপ-বি ভাইরাস। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূল ভাইরাস বা টাইপ-এ ভাইরাসটি বাদুর থেকে পাঙ্গোলিনসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে। তবে চীনে এই ভাইরাসের হার ছিল তুলনামূলক কম। বরং সেখানে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে টাইপ-বি ভাইরাসের সংক্রমণ। এই টাইপ-বি ভাইরাস ক্রিস্টমাসের মৌসুমে বিস্তার লাভ করেছিল। বিশ্লেষণের ফলাফল অনুসারে, টাইপ-এ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়া ও সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিমধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গবেষকরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত মার্কিনিদের সংগৃহীত নমুনার দুই-তৃতীয়াংশের মধ্যে টাইপ-এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। তবে এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেছে পশ্চিম উপকূলে, নিউ ইয়র্কে নয়।
ক্যামব্রিজের ম্যাকডোনাল্ড ইন্সটিটিউট অব আর্কিওলজিক্যাল রিসার্চের ফেলো ও প্রজননবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ড. পিটার ফরস্টার ও তার দল সারস-কভ-২ ভাইরাসের প্রজনন ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা জানান, যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে টাইপ-বি ভাইরাস। সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনার তিন-চতুর্থাংশের মধ্যেই এই ক্যাটাগরির ভাইরাস ধরা পড়েছে। এছাড়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসেও এই টাইপ-বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। এদিকে, টাইপ-সি ভাইরাস বিবর্তিত হয়েছে টাইপ-বি থেকে। এটি সিঙ্গাপুর হয়ে ইউরোপে ছড়িয়েছে। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সারস-কভ-২ নামের এই ভাইরাসটি মানবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে নিজের বিবর্তন ঘটাচ্ছে। স্থানভেদে সে বিবর্তন হচ্ছে ভিন্ন রকমের।
এই গবেষণায় হতভম্ব হয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরাও। জানুয়ারির মধ্যেই টাইপ-এ ও টাইপ-বি উভয় ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণই বিদ্যমান ছিল। চীনে টাইপ-বি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলেও যুক্তরাজ্যের পশ্চিম উপকূলে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে টাইপ-এ ভাইরাসের সংক্রমণ। গবেষণাটি বিস্তৃত পরিসরে করতে না পারায় এর কারণ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা। প্রাথমিকভাবে বিশ্বজুড়ে মাত্র ১৬০ জন আক্রান্তের নমুনার উপর ভিত্তি করে এই গবেষণা সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে অনেক নমুনাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রথম দিককার আক্রান্তদের থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাতে যোগ করা হয় এক হাজারের বেশি নমুনা। এখন পর্যন্ত গবেষণাটি অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পুনর্বিচার (পিয়ার রিভিউ) করা হয়নি।

Share.