ডেস্ক রিপোর্ট: যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সব ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (লেনদেন স্থগিত) করার পর এবার একই জালে সপরিবারে আটকা পড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার। তার সঙ্গে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরও তিন নেতার ও তাদের পরিবার সদস্যদের এবং গ্রেফতার হওয়া দুই কাউন্সিলর মিজান ও রাজীবের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) এনবিআর থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এ সংক্রান্ত পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। যাদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, তার স্ত্রী পারভীন লুনা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নিলা এবং তাদের প্রতিষ্ঠান ফাইন পাওয়ার সল্যুয়েশন লিমিটেডের; স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান, তার স্ত্রী লুতফুর নাহার লুনা, বাবা আবুল খায়ের খান, মা রাজিয়া খান এবং তাদের প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রীন লাইন লিমিটেডের; যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, তার স্ত্রী সুমি রহমান, তার প্রতিষ্ঠান মা ফিলিং স্টেশন, আরেফিন এন্টারপ্রাইজের। এছাড়াও ব্যাংক হিসাব স্থগিত করাদের মধ্যে রয়েছেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ। তিনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সেলিমের ছোট ভাই। চিঠিতে মারুফ, তার স্ত্রী সানজিদা রহমান, তাদের দুইটি প্রতিষ্ঠান টি-টোয়েন্টিফোর গেমিং কোম্পানি লিমিটেড ও টি-টোয়েন্টিফোর ল ফার্ম লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন ও স্থানান্তর করতে পারবেন না। এদের বাইরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীবের। এর ফলে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে আর কোনও টাকা উত্তোলন ও স্থানান্তর করতে পারবেন না। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১১৬ ধারার ক্ষমতাবলে এনবিআর থেকে ব্যাংকগুলোকে এ আদেশ দিয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অভিযোগ করেন, যুবলীগের কিছু নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া ও অপরাধে লিপ্ত হয়ে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। এরপর এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তার নির্দেশের পর র্যাব অভিযানে নেমে রাজধানীর বেশ কিছু ক্লাব থেকে ক্যাসিনো পরিচালনার সরঞ্জাম উদ্ধার করে সেগুলো সিলগালা করে দেয়। এ অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় একই ধরনের অভিযোগে গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আফতাব উদ্দিন সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীবকে। ওই বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র, মদ ও নগদ অর্থ উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে গ্রেফতার করে র্যাব। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে র্যাবের একটি বিশেষ টিম গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন এবং নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বিকালে মিজানকে নিয়ে ঢাকার লালমাটিয়ায় তার অফিস ও মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এদিকে, যুবলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর অভিযোগের তীর ছোটে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর দিকে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয় নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর ওপর রুষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। গত রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত যুবলীগের বৈঠকেও সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে গণভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ওই বৈঠকেই ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠনটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর আজ তিনি ও তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ ( লেনদেন স্থগিত) করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১১৬ ধারার ক্ষমতাবলে এনবিআর থেকে ব্যাংকগুলোকে এ আদেশ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে এনবিআর বলেছে, ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী ও ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব থেকে কোনও টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তর করা যাবে না। একই চিঠিতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লেক ভিউ প্রোপার্টিজ ও রাও কনস্ট্রাকশনের হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে। চিঠিতে তাদের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ধানমন্ডি ৮ /এ সড়কের ইস্টার্ন হেরিটেজ, রমনার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ৪৫ নম্বর বাসা ও চট্টগ্রামের রাউজানের সূত্রাপুর। এর আগে ৩ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তখন তার নামে থাকা সব হিসাবের লেনদেন তথ্য, বিবরণীসহ সব পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির ঘটনায় এর আগেও কয়েকজন যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ । ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, নুরন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, সেলিম প্রধান, জি কে শামীম, খালেদসহ বেশ কয়েকজন ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।
এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতিসহ ৬ নেতার পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
0
Share.